বাহক নিউজ় ব্যুরো: করোনার প্রকোপ মরচে ধরিয়েছে ঢাকির আয়ে। বহু বছর ধরে ঢাক বাজিয়ে এলেও ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে শেষপর্যন্ত ঢাকের স্পর্শকে বিদায় জানাতে হল। যেখানে মাত্র কয়েকদিন বাকি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো শুরু হতে, সেখানে সামনে ঢাক থাকলেও, সেই ঢাকের তালে মাতিয়ে তুলতে পারবেন না মালদার ঢাকিরা।
এই দৃশ্য মালদার কালিয়াচক এলাকার ২ ব্লকের রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নওগাঁ এলাকার। বহু জায়গায় ঢাকে কাঠি পড়ত এই এলাকার ঢাকিদের হাত ধরেই। কিন্তু, করোনার কারণে, পান নি কাজের বরাত, ফলত বহু ঢাকি তাঁদের পুরোনো কাজকে বিদায় জানিয়ে অন্যান্য কাজে নিজেদেরকে নিযুক্ত করেছেন।
কোনো ঢাকি পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে, কোনো ঢাকি ইঁটভাটার কাজ শুরু করেছেন, কোনো ঢাকি আবার শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। কোনো ঢাকি জুতো সেলাইয়ের কাজও শুরু করেছেন। ঢাকিরা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বিগত দু বছর ধরে লকডাউনের প্রকোপে বায়না আসেনি তাঁদের দুয়ারে। ফলত, অধিকাংশ ঢাকিরাই তাঁদের পুরোনো কাজকে বিদায় জানিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে নয়া কাজকে আপন করে নিয়েছেন।
তাঁরা জানিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের তরফে তাঁরা কোনো সরকারি ভাতা পাননি। অভাবের তাড়নায় অনেকেই অভিমান করে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন। করোনাকালে এইভাবে কাজের বরাত না পেয়ে ঢাকিরা কাজ ছাড়তে থাকলে, খুব শীঘ্রই বাংলার প্রাচীন শিল্প অবলুপ্ত হওয়ার পথে এক পা বাড়িয়ে দেবে।
মালদার নওগাঁয় রয়েছে শুধুমাত্র ঢাকিদেরই একটি পাড়া। এই পাড়ায় কমপক্ষে ৫০টিরও বেশি ঢাকির পরিবারের বাস। কিন্তু, করোনার প্রকোপে কর্মজীবনের অস্তিত্বটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ ঢাকিরাই দিল্লী, মুম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, আসাম, ঝাড়খণ্ড, বিহার প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন পেটের দায়ে।
এদিকে, ওই ঢাকি পাড়াতেই বসবাসকারী দুই ঢাকি উত্তন রবিদাস ও বাবলু রবিদাস এই প্রসঙ্গে নিজের মনের কথা জাহির করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ভিন্ন রাজ্য থেকে কাজের বরাত আসতো। অর্থ উপার্জনের জন্যে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়ে যে ‘মোটা’ টাকা আয় হতো, তাতেই ওই পাড়া সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু, এই ২ বছর ধরে ভিন রাজ্য হোক স্থানীয় এলাকা, কোনো জায়গা থেকেই ঢাক বাজানোর বায়না আসে না।
Published on Friday, 17 September 2021, 11:48 am | Last Updated on Friday, 17 September 2021, 12:05 pm by Bahok Desk













