বাহক নিউজ় ব্যুরো : হইচই-তে মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। ট্রেলারটি যে পরিমাণ আশা জাগিয়েছিল, নয়টা এপিসোডের সিরিজটি সেই তুলনায় বেশ কিছুটা হতাশ করল।
সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজটি বাংলাদেশের থ্রিলার লেখক মহম্মদ নাজিমুদ্দিনের একই নামের বেস্ট সেলিং উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার এলাকায় একটা গ্রামের রাস্তার ধারে একটা রেস্তোরাঁ, যার নাম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’, এই অদ্ভূত নামটাই সিরিজটির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। সাংবাদিক পরিচয়ে সুন্দরপুর গ্রামে আসেন প্রবাসী বাঙালি নিরুপম চন্দ। ওই রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন হোটেলের নামের চেয়েও বেশি রহস্যময় হোটেলের মালকিন। ওনার নাম মুসকান জুবেরি একজন রহস্যময়ী! নিরুপমের আলাপ হয় স্থানীয় ব্যক্তি আতর আলীর সঙ্গে। নিরুপম রহস্য সমাধান করতে আতরের সাহায্য চায়। নিরুপমের জানতে হবে, কেন মুসকানের কথায় লোকাল এমএলএ, এসপি থেকে শুরু করে বড় বড় কর্তারা ওঠাবসা ক’রে? কেন হোটেলের খাবারগুলো এতটা সুস্বাদু? শহরের একের পর এক লোক উধাও হয়ে যাচ্ছে কীভাবে এবং কেন, এই সমস্ত প্রশ্নই রহস্য তৈরি করে দর্শকের মনে।
নিরুপম চন্দের ভূমিকায় রাহুল বোস উপন্যাসের ‘নূরে ছফা’র থেকে আলাদা। নিরুপমের ডায়লগের অধিকাংশই ইংরেজিতে। বহু জায়গায় আতর আলি চরিত্রে অনির্বাণ ভট্ট্যাচার্য নিরুপমকে ডমিনেট করে, যেটা উপন্যাসের আতরের সাথে মেলে না। সবচেয়ে যেটা বেশি চোখে লাগে, মুসকানের ভূমিকায় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাধনের চরিত্রটি অন্যরকমভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। সঙ্গীত বিশারদ, যৌন আবেদনময়ী রূপে মুসকানকে পাওয়া যায় সিরিজে। উপন্যাস অনুযায়ী মুসকান রহস্যময়ী, বুদ্ধিমতী। ক্যাব চালক হিসেবে সৃজিত মুখার্জীকে ঠিক মানায়নি। তবে, নজর কারবে এই সিরিজের সিনেমাটোগ্রাফি ও আর্ট ডিরেকশন।
উপন্যাসের মতো ক্লাইম্যাক্সে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি পাওয়া যাবে না। সিনেমার বেশ কিছু জায়গায় দুর্বলতা খুব স্পষ্ট, যেমন ইংরাজি না বুঝেও আতর আলি কীভাবে নিরুপমের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে! ‘সাংবাদিক’ নিরুপমের আর্টিকেল লেখার বিষয়টি কীভাবে ‘ব্যক্তিগত’ হতে পারে! মুসকানকে রহস্যময়ী করতে গিয়ে সৃজিত সবসময়ই কেন মুখটা ডার্ক কালার টোনে রাখতে চাইলেন, সেটিও বোঝা গেল না। সিরিজে গানের ব্যবহার কিছুটা অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় লাগে। সবমিলিয়ে ট্রেলারে সাড়া জাগালেও আদতে হতাশ করল ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। যদি মূল উপন্যাসটি কেউ এখনও না পড়ে থাকেন তবে একবার দেখা যেতেই পারে সৃজিত মুখার্জীর ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’।