
Table of Contents
Bahok News Bureau: বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন এইচআইভি ভাইরাস (HIV Virus) সংক্রমিত রোগীরা। তাঁদের অভিযোগ যে, ভারতে এইচআইভি (HIV) তথা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (Human Immunodeficiency Virus) ড্রাগসের অভাব দেখা গেছে। একইসঙ্গে এও অভিযোগ উঠেছে যে, এআরটি (ART) তথা অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারে (Anti-Retroviral Therapy) এআরভি (ARV) তথা অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল (Anti-Retroviral) ড্রাগসেরও অভাব দেখা দিয়েছে।
এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগীরা এই অভিযোগ তুলে একটানা ৪২ দিন ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অবশেষে যদিও ৩১শে আগস্ট সেই বিক্ষোভ তুলে নেন বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীরা। সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, এই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে মন্তব্য করেছেন এইচআইভি ভাইরাস সংক্রান্ত সমাজকর্মী হরি শংকর সিং।
তিনি জানান, “নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা আবার শুরু হয়ে গেছে”। তিনি আরও জানান, সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, এনএসিএ (NACO) অর্থাৎ ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের (National AIDS Control Organization) আধিকারিক ও রোগীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন করে একটি ‘কোঅর্ডিনেশন রুম’ তৈরি করা হবে। এই রুমের মাধ্যমে দেশজুড়ে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধের সরবরাহ, উপলব্ধতা, বিতরণের কাজ চালানো হবে।
এনএসিও মূলত এক ধরণের নোডাল সংস্থা যা সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিস সোসাইটি ও ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোলের প্রোগ্রামের গতিবিধি নজরদারি ও পরিচালনা করে। এই সংস্থা মূলত এইচআইভি ভাইরাস সংক্রান্ত সমস্ত দ্রব্য ও ‘পুলড প্রকিওরমেন্ট’ নজরদারি করার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে এই সংস্থা পরিচালিত হয়।
২০২১ সালে সরকারের অধীনে প্রকাশিত এইচআইভি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ২৪.০১ লক্ষেরও বেশি মানুষ এইচআইভি সংক্রামিত। এই তালিকায় সবার আগে রয়েছে মহারাষ্ট্র। অপরদিকে, এইআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক। অপরদিকে, ১৫-৪৯ বছর বয়সের নিরিখে ২.৩৭% হারে সর্বোচ্চ এইচআইভি ভাইরাস সংক্রামিত রোগী রয়েছেন মিজোরামে। এই তালিকাতেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নাগাল্যান্ড ও মণিপুর।
এইচআইভি ভাইরাস কী? (What is HIV Virus?)
এইচআইভি ভাইরাসের কারণে মানুষের দেহের শ্বেত রক্তকণিকা আক্রান্ত হয়। শ্বেত রক্তকণিকার তথা ‘টি সেলের’ (T Cell) একটি প্রকৃতি সিডি৪(CD4)কেই নিশানা বানায় হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এই টি সেল মূলত রোগপ্রতিরোধ্য একটি কোষ। এই কোষ মূলত দেশজুড়ে থাকা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে তথা প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে এবং সেটিকে ধ্বংস করে।
এই অবস্থায়, এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহের সিডি৪ সেলকে আক্রমণ করে ও ধ্বংস করে। যার ফলে, দেশের ইমিউন সিস্টেম ও অনাক্রমতা ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় তথা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভাইরাসজনিত রোগের সব থেকে বড়ো সমস্যা হল, কারোর শরীরে একবার প্রবেশ করলে শরীর থেকে বের করা সম্ভব নয়। আর এখানেই তৈরি হয় সমস্যা। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যেখানে সিডি৪-এর সংখ্যা ৫০০-৬০০ হয়। সেখানে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রামিত রোগীর দেহে এই সংখ্যা কমতে কমতে ২০০-তে নেমে পড়ে।সঠিক চিকিৎসা না হলেই এই এইচআইভি ভাইরাসের কারণেই দেখা দেয় এইডস (AIDS) তথা (Acquired Immunodeficiency Syndrome)।
আরও পড়ুন: Jatindra Nath Das Death Reason: যতীন্দ্রনাথ দাস স্মরণীয় কেন?, মৃত্যুর কারণ ও জীবনী
অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি কী: (What is Anti-Retroviral Therapy?)
এইচআইভি সংক্রামিত রোগটি সম্পূর্ণভাবে না সারলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া রোধ করা সম্ভব হয়। এই থেরাপি মূলত এইচআইভি ভাইরাস পজিটিভ সঙ্গীর কাছ থেকে এইচআইভি নেগেটিভ সঙ্গীর কাছে ভাইরাসের স্থানান্তরণে বাধা দেয়। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধের সেবন করতে হয়। এই সমস্ত ওষুধের চিকিৎসাই ‘অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি’ নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধ এই রোগের একমাত্র ওষুধ হওয়ায় তা নিয়মিতভাবে সেবন করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে যাতে এইচআইভি ভাইরাস বিজ্ঞানের ভাষায় প্রচ্ছন্ন থেকে যায় তথা চাপা থেকে যায়।
অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধ যদি নিয়মিতভাবে না নেওয়া হয় তথা কোনো একটা ওষুধের ডোজ় যদি ছেড়ে যায় তাহলে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পায় এবং রোগীর সও স্বাস্থ্য আরও খারাপ হতে থাকে তথা শারীরিক পরিস্থিতিতে অবনতি দেখা দিতে শুরু করে। এই অবস্থায় এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের অভিযোগ কপালে উদ্বেগের ভাঁজ ফেলার মতো।
হু (WHO) তথা ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন অনুসারে, “সঠিক ও পর্যাপ্ত অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি কমপক্ষে তিন প্রকারের অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ড্রাগসের সমন্বয়ে গঠিত। এই থেরাপি এইচআইভি ভাইরাসকে চাপা রাখতে সাহায্য করে ও রোগের বৃদ্ধিতেও ‘দাঁড়ি’ লাগায়”।
এইচআইভি-এর মোকাবিলা করার জন্য ভারতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? (What initiative has been taken by Indian Government?)
২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ৭৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য স্থির করেছে ভারত সরকার। ভারত সরকারের এও লক্ষ্য রয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস মুক্ত ভারতরূপে ভারতকে পরিচয় দেওয়ার। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত বা এইডস রোগীদের রক্ষার স্বার্থে বিশেষ আইনও বলবৎ করা হয়েছে।
উক্ত আইন ‘এইচআইভি/এইডস আইন, ২০১৭’ নামে পরিচিত। এই আইনের দৌলতে বৈষম্যজনিত আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং একইসঙ্গে চিকিৎসাজনিত বিভিন্ন খরচে সহযোগিতা করে। একইসঙ্গে এই আইনের সহায়তায় অনুমতি সহকারে গবেষণা, এইচআইভি স্ট্যাটাস এবং সমস্ত তথ্য গোপন রাখার দায়বদ্ধতাও অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি/এইডস মুক্ত ভারত গড়তে জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে ‘দ্য ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান (২০১৭-২৪)’ এবং ‘মিশন সম্পর্ক’ (Mission SAMPARK) চালু করা হয়েছে। এই মিশনের লক্ষ্যই হল এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের খুঁজে বের করা এবং অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপির ছত্রছায়ায় আনা।
Published on Tuesday, 20 September 2022, 2:21 am | Last Updated on Tuesday, 20 September 2022, 10:28 am by Bahok Desk








