Table of Contents
Bahok News Bureau: ‘মা আসছে’! বাঙালির চিন্তনে-মননে এই নিয়ে একটা আলাদাই অনুভূতি। এদিকে, যেখানে দুর্গাপূজা একদম দোর গোড়ায়। সেখানে এই ইঁদুর দৌড় জীবনে অনেকেরই কিছুই প্রস্ততি নেওয়া হয়নি নিজের স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু, প্রত্যেক মণ্ডপ পরিদর্শনের সময়ে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে প্রায় প্রত্যেকেই নিজের প্রিয় পোশাকটিতে (পাঞ্জাবি বাঁ টি শার্ট বাঁ শাড়ি বাঁ কুর্তি হোক বা টপস) নিজেকে নিজের মতো মানানসই দেখাতে চায়।
কিন্তু, হায়! সময়টাই তো নেই। এবার কী হবে? বাড়ির বাইরের হোক বা বাড়ির ভেতরের কাজ, এখনও পরিত্রাণ পাওয়া যায়নি যে, একটু প্রাণায়াম বা আসন করা হবে। দিনের শেষ ক্লান্ত শরীর ও ঘুম দিয়ে বা সকালের শুরু তেজোময় শরীরে ও আবারও ব্যস্ত দিনের সূত্রপাত দিয়ে। এইসবের যাঁতাকলে চলছে জীবন। কিন্তু, দু-মিনিট থেমে ভাবুন তো? শরীরের ওপর দিয়ে যে ধকলটা যাচ্ছে শরীর সহ্য করছে পারছে তো? শরীরটা কোনো এক সময়ে ‘ভেঙে পড়বে’ না তো? আর ঠিক পূজার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়বেন না তো? এই সমস্ত প্রশ্ন যদি আপনার কপালে ‘কুঞ্চনের’ সৃষ্টি করে, তাহলে বুঝবেন আপনি আপনার শরীরের যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছেন না। এবার, পূজা যেহেতু একদম দোরগোড়ায়, নিশ্চয়ই আপনি চিন্তা করছেন যে, কী করবেন? চিন্তা নেই, আপনার চিন্তার ওষুধ এনেছে ‘বাহকদল’। কোনো অতিরিক্ত সময় খরচ করতে হবে না আপনাকে। নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করলে, শুধুমাত্র ‘সঠিকভাবে’ অভ্যাস বদলানোর মাধ্যমেই আপনার ওজন কমে যেতে পারে। এই অবস্থায়, আজ এমন কিছু অভ্যাস নিয়ে কথা বলবো যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়া কে আরও ত্বরান্বিত করবে।
ওজন কমানোর জন্য সকালে উঠেই কী করবেন?
সকালে ঘুম থেকে ২ গ্লাস জল পান করুন খালি পেটে। এর মধ্যে এক গ্লাস জল পান করবেন জিরাজুক্ত এবং আরেক গ্লাস জল পান করবেন লেবুযুক্ত। জিরাযুক্ত জলের জন্য জন্য ১ চামচ জিরা ২ কাপ জলে ফুটিয়ে নিয়ে হালকা ঠান্ডা হলে খেতে হবে। আর লেবুযুক্ত জলের জন্য বোতলে জল নিয়ে তাতে একটি পাতিলেবু স্লাইস করে কেটে যোগ করতে হবে। এভাবে সারারাত ঢাকনা লাগিয়ে রেখে দিয়ে পরের দিন সকাল বেলা সেই জল এর ১-২ গ্লাস (চাহিদা অনুযায়ী) পান করতে হবে।
উপকারিতা:
• খালি পেটে জল পান করলে শরীরে মেটাবলিক রেট (Metabolic Rate) বৃদ্ধি পায় যা ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
• লেবুতে পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• জিরা অ্যালডিহাইড, থাইমল এবং ফসফরাসের মতো উপাদানগুলি ভাল ডিটক্সিফাইং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। টক্সিনকে শরীর থেকে বের করে দেয়। ক্ষতিকারক লিপিড প্রোফাইল কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। সবমিলিয়ে এগুলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আপনি সারাদিন কি খাবেন ? কখন খাবেন?
সকালের খাদ্যাভাস (Breakfast) পরিবর্তন তো এবার হয়ে গেল। এবার সারাদিনে কী কী খাবেন? সকালে ঠিকভাবে পালন করার পরে, সারাদিনে যদি উল্টোপাল্টা খাবার খান, তাহলে কিন্তু সবই গণ্ডগোল হয়ে যাবে!! আর এই জন্যেই আমরা সারাদিনের একটি বিশেষ খাদ্যাভাস নিয়ে এসেছি। এইটাও কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে, একটু এদিন হওয়া চলবে না কিন্তু। চলুন, এবার দেরি না করে, একটি তালিকা প্রস্তুত করুন (অবশ্যই একজন Certified Dietitian এর পরামর্শ নিন)। সারাদিনে নির্দিষ্ট তালিকা থাকলে আপনি আগে থেকে আপনাকে কী খেতে হবে এবং কী বাদ দিতে হবে (Meal Idea) পেয়ে যাবেন তাতে করে আপনি আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে পারবেন। যার ফলে হাতের সামনে যা থাকবে খেয়ে ফেলা বা বাজারজাত/প্যাকেটজাত/প্রক্রিয়াকৃত খাবার থেকে আপনি দূরে থাকবেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ পদক্ষেপ এটি একটি লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট (Lifestyle Management)।
• চিনি পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে চলুন। চিনির বিশেষ কোনো পুষ্টি গুন নেই , শুধু মাত্র এম্পটি ক্যালোরি (Empty Calorie) দেয়। যে সমস্ত খাবারে চিনি থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন যেমন- কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট, ঠান্ডা পানীয়, চিনি দেওয়া চা /কফি, মিল্কশেক, (Canned Juice) ইত্যাদি।
• আপনার সকালের খাবার (Breakfast Platter) সব সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ (Protein Rich) ও ফাইবার সমৃদ্ধ (Fiber Rich) হবে আর তাতে জটিল শর্করা (Complex Carbohydrates) থাকবে। জটিল শর্করা পাবেন গমের আটা তে, অটস-এ (Oats), বিভিন্ন ধরনের ডালে, বাজরাতে, রাগিতে। ময়দা দিয়ে প্রস্তুত খাবার এড়িয়ে চলুন মনে রাখবেন বিস্কুট ময়দা দিয়ে তৈরি, তাই ‘আমি তো সকালে দুটো বিস্কুট খায় বেশি কিছু খাই না’ এটা করবেন না। ব্রেকফাস্টে (Breakfast) একটা গোটা ফল রাখুন, সেটা যেকোনো ফল হতে পরে (কাঠাল, আতা, সবেদা, পাকা আম বাদে)। সকালের খাবার কখনই মিস করবেন না।
• পাউরুটি জেলি/মাখন পাউরুটি কে কখনওই পুষ্টিকর খাবার ভেবে ভুল করবেন না।
• কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate) ও ফ্যাট (Fat) এর সমাহার (Combination) এড়িয়ে (Avoid) যান। এটি ওজন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- পাউরুটি এর সাথে মাখন/ ভাতের সাথে ঘী।
• আপনার প্রতিদিনের ফ্যাট বা তেলের পরিমাণ হবে ২৫-৩০ গ্রাম। বাড়িতে যদি নিজের জন্যে আলাদা ভাবে তেল মেপে রান্না করতে না পারেন তবে তেল টা সরিয়ে রেখে খান বা ঝোল গ্রেভি যেটাই বলিনা কেনো এড়িয়ে চলুন। যেমন ধরুন, মাছের ঝাল থেকে শুধু মাছ টা তুলে খেলেন বাঁ মাংসের টুকরো গুলো তুলে খান।
• হাঁটার চেষ্টা করুন ৩০ মিনিট (30 min) কমপক্ষে বা ফ্রী হ্যান্ড করতে পারেন।
• সময় মতো রাতে ঘুমিয়ে পড়ুন, কারণ বেশি রাত জাগলে খিদে পাবে।
• বেলা গড়িয়ে গেলে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিন। দুপুরে যা খেয়েছেন, রাতে তার অর্ধেক (১/২) খান। দুপুরে এককাপ ভাত খেলে রাতে অর্ধেক কাপ (১/২ কাপ) খাবেন, দুপুরে দুটো রুটি খেলে রাতে একটা রুটি খাবেন।
• রাত ৮টার মধ্যে যেনো আপনার খাওয়া শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ ৮ টার পর আপনি জল ছাড়া আর কিছুই খাবেন না।
• চেষ্টা করুন ১২ ঘণ্টা পেট (Stomach) খালি রাখতে এর বিশেষ গুনাগুন আছে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। যদি ৮ টায় খাওয়া শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ ডিনার হয়ে যায়, তাহলে আপনার পরের দিনের ব্রেকফাস্ট হবে সকাল ৮ টায়।
• সারাদিনে ৪ লিটার জল অবশ্যই পান করতে হবে।
• খাদ্য তালিকাতে সবুজ শাক সবজি, সবুজ ফল তথা সাইট্রাসযুক্ত ফল যুক্ত করুন।
• প্রতি কেজি ওজনে ১-১.৫ গ্রাম প্রোটিন আপনার তালিকাভুক্ত করুন। আপনার ওজন ৬০ কেজি হলে হলে, আপনাকে প্রতিদিন ৬০-৬৫ কেজি প্রোটিন খেতে হবে। প্রয়োজনে বিশেসজ্ঞের পরামর্শ নিন, একজন সার্টিফায়েড ডায়াটেশিয়ান (Certified Dietitian) আপনাকে জানিয়ে দেবে প্রোটিনের উৎস ওর সেটার পরিমাণের ব্যাপারে)।
আরও পড়ুন: Who founded Digha? : ‘দীঘা’র প্রতিষ্ঠাতা কে?, দীঘার কথা ইতিহাসের পাতায়- প্রথম পর্ব
• ‘বিঞ্জ ইটিং’ (Binge Eating) করবেন না পর্যাপ্ত খাদ্য (Proper Meal) নির্দিষ্ট সময় মতো খেয়ে ফেলুন। ‘বিঞ্জ ইটিং’ বলতে সারাদিন খাবার ছাড়াও আমরা অতিরিক্ত যে খাবার (snack) করে থাকি তাকে বলে, যেমন ইচ্ছে হলো একটা বিস্কুট খেয়ে ফেললাম, একটু কেক খেলাম, একটা মিষ্টি খেলাম, এই ধরেনের জিনিস চলবে না। কারণ, এইগুলোই হচ্ছে ‘বিঞ্জ ইটিং’।
• আপনার খাদ্যগ্রহণ মধ্যবর্তী সময় (Meal Gapping) যেনো ২.৫-৩ ঘণ্টার বেশি না হয়। উল্লেখ্য, ডায়াটেশিয়ানরা (Dietitian) খাদ্য তালিকার পাশাপাশি সময়ও নির্দিষ্ট করে দেন।
• বিকেলের নাস্তা তে অঙ্কুরিত ছোলা/মুগ রাখতে পারেন। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে পেট ভরাবে অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো ছাড়াই। সঙ্গে গ্রিন টি-ও (Green tea) পান করতে পারেন।
• ডিনারে স্যুপ রাখতে পারেন, তাতে আপনার পেট ভরবে আর অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাওয়ার চাহিদা কমবে।
• খাবারে গোলমরিচগুঁড়ো, জিরে গুঁড়া, ধোনে গুঁড়ো যোগ করুন এগুলো আপনার মেটাবলিজম বুস্ট (Metabolism Boost) করতে সাহায্য করবে।
সবশেষে এটাই বলতে চাই, “সুস্থ থাকুন , ভালো থাকুন, নিজের যত্ন নিন”…
– শাহীন পারভিন (Nutritionist)