mahsa amini in black dress and in a shirt, one women cutting her hair, another women throwing hijab
Mahsa Amini-Iran Women: মাহাসা আমিনির মৃত্যুতে 'চিৎকার' ইরান সমাজের 'কালো চিত্রের', 'সাহার খোদায়ারি অগ্নিদগ্ধ' ঘটনা আজও তাজা, গ্রাফিক্স: বাহক

Bahok News Bureau: মাহাসা আমিনির  মৃত্যুতে কেঁপে উঠল ইরান। শয়ে শয়ে নারী পথে নামলেন মাহাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে। বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী নারীদের কণ্ঠে কম্পিত হল ইরানের ভূমি। মাহাসা আমিনি হিজাব না পরার কারণে খুনের শিকার হয়েছে, এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। আর তারপরেই রণক্ষেত্র হয় ইরান। তবে এই ধরণের ঘটনার শিকার ইরানী নারীরা প্রথমবার হননি। এর আগেও ‘নীতি পুলিশের’ নীতির শিকার হয়ে ‘অগ্নিদগ্ধ’ হতে হয়েছে সাহার খোদায়ারিকে।

ইরানে হিজাব পোড়ানো ও চুল কেটে ছোট করার প্রেক্ষাপট: 

মাহাসা আমিনি মূলত ইরানের (Iran) কারদিস্তান প্রদেশের (Kurdistan Province) সাক্কেজ (Saqqez) এলাকার বাসিন্দা। চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবারে মাহাসা আমিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য ইরানের রাজধানী তেহরানে গেছিলেন। এরই তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে উত্তর তেহরানে (Northern Tehran) গাড়ির মধ্যে ছিলেন। সেই সময়েই তাঁকে গ্রেফতার করে ইরানের ‘নীতি পুলিশ’ (Molality Police)। এই ‘নীতি পুলিশের’ দায়িত্ব হল ইরানের বাসিন্দারা ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করছেন কিনা, তা লক্ষ্য রাখা ও প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করতে গ্রেফতার করা। দাবি, মাহাসা আমিনি হিজাব না পরার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার ‘নীতি পুলিশ’ এবং তারপরেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

আরও পড়ুন: HIV Drugs Shortage Row: এইচআইভি কী? ভারতে এইচআইভি ওষুধের অভাবের জেরে আন্দোলন? মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

ঠিক কী ঘটেছিল?

ঘটনার দিন ঠিক কী ঘটেছিল? এই প্রশ্নটা উঠলেই দুই পক্ষের তরফে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির উত্তর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। যেখানে মাহাসা আমিনির পরিবারের সদস্যদের তরফে দাবি করা হয় যে, গ্রেফতারের পর আমিনিকে ভ্যানে মারধোর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাঁরা এক প্রত্যক্ষদর্শীও উল্লেখ করেন। অপরদিকে, পুলিশ আমিনির পরিবারের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, মাহাসা আমিনির হার্ট অ্যাটেক হওয়ার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

মাহাসা আমিনির (Mahsa Amini) মৃত্যু মূলত ইরান সরকারের ভীত নড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় দেশের উচ্চ আধিকারিকসহ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইজি (President Ebrahim Raisi) প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এই অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্টের তরফে মাহাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পূর্ণ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গত রবিবারে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মাহাসা আমিনির পরিবারকে ডাকেন এবং তাঁদেরকে পূর্ণ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “আপনার কন্যা আমার নিজের সন্তানের মতো। আমার মনে হচ্ছে যেন আমার পরিবারের কারোর সঙ্গে এই অঘটন ঘটেছে”। ইরানের প্রধান বিচারপতি মোহসেনি এজেইও পূর্ণ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: Maharashtra Women – Hysterectomy: মহারাষ্ট্রীয় মহিলাদের ‘হিস্টেরেক্টমি’, সামাজিক শোষণ না আর্থিক চাহিদা! কেন জরায়ুর অপসারণ?

উল্লেখ্য, ইরান সরকারের তরফে পূর্ণ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও, ঘটনা ঘটার পরেই নিজের আঁচল থেকে দাগ ঝাড়ার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। মাহাসা আমিনির মৃত্যুর ঠিক পরেই ইরান পুলিশের তরফে একটি নজরদারি ক্যামেরার একটি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। এই ফুটেজের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু ঘটেনি। ইরান সরকার কর্তৃক পরিচালিত আইআরএনএ নিউজ এজেন্সি অনুসারে, “ভিডিওতে দেখা গেছে যে, পুলিশ স্টেশনে এক মহিলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময়ে হঠাৎই মাহাসা আমিনি একটি চেয়ারে পড়ে যান”।

মাহাসা আমিনির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: 

ব্রিটিশ ইরানীয় অভিনেতা অমিদ জালিলি (Omid Djalili) এই ঘটনাকে ‘ইরানের জর্জ ফ্লয়েড আন্দোলন’ (Iran’s George Floyd moment) বলে অভিহিত করেছেন। মাহাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি এই ঘটনাকে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানেন। প্রসঙ্গত, জর্জ ফ্লয়েড আন্দোলনে আমেরিকার বাসিন্দারা পুলিশি নীতিতে পরিবর্তনের দাবি করেছিল। জর্জ ফ্লয়েডেরও মৃত্যু পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীনই হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ‘Toilet’- ek ‘Pressure’ Katha: বাঙালির কীর্তিতে ট্রেনে ‘শৌচাগার’, ভারতীয় রেলে ‘টয়লেট’র ইতিহাস, টয়লেট সৃষ্টি- পর্ব ১

অপরদিকে, রাষ্ট্রসংঘের তরফেও এই ইস্যুতে মন্তব্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারের নাদা-আল-নাসিফের (Nada Al-Nashif )মন্তব্য, “মাহাসা আমিনির অকাল মৃত্যু, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত শুরু হওয়া উচিত”। রাষ্ট্রসংঘের আরও বক্তব্য, “এই তদন্তের পরিচালনা এমন স্বাধীন উপযুক্ত সংস্থার হাতে দেওয়া উচিত, যাদের হাত ধরে মাহাসা আমিনির পরিবার ন্যায় বিচার পাবে”।

মাহাসা আমিনির মৃত্যু ইরান সমাজের কোন ‘কালো চিত্রকে’ তুলে আনল?

এই ধরণের ঘটনা এই প্রথম ইরানে ঘটেনি। এর আগেও এই রকমেরই এক ঘটনা ইরানের সামাজিক নীতিতে প্রশ্ন তুলেছিল। ঘটনাটি ২০১৯ সালের। ওই বছরে ২৯ বছর বয়সী সাহার খোদায়ারি (Sahar Khodayari) ছেলেদের মতো সেজে ছিলেন এবং একটি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে মেন্স সসার ম্যাচ দেখতে গেছিলেন। ব্যাস! এইটাকে তাঁর অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয় এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনি যখনই জানতে পারেন যে, তাঁকে শুধুমাত্র ছেলে সেজে যাওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁকে ৬ মাসের জেল হাজতে থাকতে হবে। তিনি সেই সাজার প্রতিবাদে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেন এবং এর জেরে তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন: Jatindra Nath Das Death Reason: যতীন্দ্রনাথ দাস স্মরণীয় কেন?, মৃত্যুর কারণ ও জীবনী

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লিঙ্গ বৈষম্য কেন্দ্রিক নির্যাতন তথা অনার কিলিং-ও সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে ইরানে। ইরানের আইন রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা খুবই অল্প। মাহাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরান বিষয়ক মার্কিন প্রতিনিধি রবার্ট ম্যালি (Robert Malley) নিজের মন্তব্যে সরাসরি ইরানী নারীদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দাবির সমর্থনে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র মৌলিক অধিকার পালনকে কেন্দ্র করে নারীদের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ ইরানকে বন্ধ করতে হবে”।