Table of Contents
Bahok News Bureau: শক্তিপূজোর ইতিহাস বাংলায় বেশ পুরোনো। কার্তিক মাসের ঘোর অমাবস্যায় গোটা শহরকে আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়। ধূমধাম করে পালিত হয় কালীপুজো (Kalipuja 2023) ও দীপাবলি (Deepawali 2023)। আলোকসজ্জা ও আতসবাজির শব্দের মধ্যেই সারা রাত ধরে সম্পন্ন হয় কালীপুজো। আবার এই দিন সন্ধ্যেবেলা পূজিত হন মা লক্ষ্মী। কালীমূর্তিতে শক্তি আরাধনা ঠিক কত বছর ধরে হয়ে আসছে সেই নিয়ে অনেকের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ বঙ্গদেশে প্রথম আজকের পরিচিত কালীমূর্তির অবতারনা করেন। তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তিকে আগমবাগীশ মাতা বা আগমেশ্বারী মাতা (Agameswari kali Mata) বলা হয়।
আগমেশ্বারী মাতা (Agameswari Kali Mata):
আগমবাগিশের এই শক্তি সাধনার স্থানটি হলো নবদ্বীপ (Nabadwip)। মতান্তরে শান্তিপুর (Shantipur)। বর্তমানে নবদ্বীপ ও শান্তিপুর উভয় শহরেই আগমবাগিশ মাতার পূজা হয়। এর আগেও কালীপুজোর প্রচলন ছিল বাংলায়। তবে হাতে গোনা কয়েকটি পুজোই করা হত। কালীর উপাসকরা তামার টাটে কালীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে মায়ের পুজো করতেন। এইসময় প্রদীপের আলোয় সেজে ওঠে ঘরের উঠোন, বারান্দা। কিন্তু এমন প্রথার নেপথ্যে থাকা কারণগুলি জানেন? আসুন জেনে নিই। মহালয়া অর্থাৎ পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের শুভারম্ভ। এই সময় বিদেহী আত্মারা জল গ্রহণের জন্য মর্ত্যে আসেন।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তারা দীপাবলি (Deepawali) পর্যন্ত মর্ত্যেই থাকেন। দীপাবলির অমাবস্যা তিথিতে ফের আত্মারা ফিরে যান স্বর্গলোকে। অন্ধকারে যাতে পিতৃপুরুষদের ফিরে যেতে কোনো অসুবিধা না হয়, তাই তাদের পথ আলোকিত করে রাখতেই ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় প্রদীপ। এই তিথির নাম তাই দীপান্বিতা অমাবস্যা। এই সময়ে হওয়া কালীপুজোকে তাই দীপান্বিতা কালীপুজোও (Dipannita Kalipuja) বলা হয়। জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের স্মার্ত পণ্ডিত ও নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজোর বিধান দেন। তবে কালীপুজোর কোনো উল্লেখ করেননি তিনি।
মা কালীর জন্ম (Origin of Maa Kali):
এরপর অষ্টাদশ শতকে প্রকাশিত কালী সপর্যাস বিধিতে প্রথম বার দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর (Kalipuja) উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু সপ্তদশ শতকে বাংলায় কালীপুজোর (Kalipuja) প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবার আসি দেবীর আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে। দেবী নানা রূপে ভক্তদের মাঝে অবতীর্ণ হন। কালীর জন্ম নিয়েও আছে এক কাহিনি। মনে করা হয় যখন স্বর্গে অসুরেরা তান্ডব চালাচ্ছে দেবতাদের স্বর্গ রাজ্য দখলের উদ্দেশে। ঠিক তখনই দেবতারা মিলে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গার। আর সেই অসুরদের প্রধান ছিল রক্তবীজ। সে ছিল ব্রহ্মার বর প্রাপ্ত। ব্রহ্মার বর অনুসারে তাঁর এক ফোঁটা রক্ত ভূতলে পতিত হলেই তা থেকে জন্ম নিচ্ছিল একাধিক অসুর।
মা কালীর সৃষ্টি কথা:
সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই মা দুর্গা ভ্রু যুগলের মাঝ খান থেকে জন্ম দেন কালীর। সেই কালীর ভয়াবহ রুদ্রমূর্তী আর তাঁর হাতেই একের পর এক অসুর বধ হতে থাকে (kali asura)। অসুরের শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত ক্ষরণ হলেও তা জিভ বের গ্রাস করতে থাকেন কালী। এই ভাবেই একের পর এক অসুরকে প্রথমে বধ করেন কালী। তার পরে রক্তবীজকে মেরে তাঁর শরীরের সমস্ত রক্ত পান করে নেন কালী। তিনি এমনটা করে ছিলেন যাতে এক ফোঁটা রক্তও নীচে পড়তে না পারে। অসুরের সব রক্ত শুষে নিয়ে তার রক্ত শূন্য দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেন তিনি। আর এই ভাবেই তিনি ধ্বংস করেন অসুরদের।
আমরা যে রূপে কালীকে (Maa Kali) পুজো করি সেখানে কালীর পায়ের নীচে শায়িত থাকেন শিব (Shiva)। আসলে অসুরদের হারিয়ে প্রবল বিজয় নৃত্য শুরু করেছিলেন কালী। অসুরদের ধরহীন মুন্ড দিয়ে তিনি বানিয়ে ছিলেন কোমড়বন্ধ ও গলার মালা। কালীর সেই নৃত্য স্বর্গে ত্রাহি-ত্রাহি রব ছাড়ে। কালীর নাচে তখন সব কিছু প্রায় ধ্বংস হতে শুরু হয়েছে। এমন অবস্থায় কালীর সেই নৃত্য মহাদেব বন্ধ করতে কালীর সামনে গিয়ে শুয়ে পরেন। তার পরে নিজের পায়ের নীচে স্বামীকে শুয়ে থাকতে দেখে জিভ কাটেন তিনি। পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে সেই সময় কালীর সেই রূপ পূজিত হয়ে আসছে আজও।
মা কালীর বিভিন্ন রূপ:
বাঙালি সমাজে পরিচিত দেবীর রূপগুলি কোনোটি শাস্ত্র সঙ্গত, কোনোটি আবার লৌকিক। বঙ্গদেশে নানা ধরনের কালীমূর্তির প্রচলন রয়েছে যেমন, দক্ষিনা কালী, বামা কালি, চিৎ কালী, শীর কালী,রক্ষা কালী, শ্মশান কালী, রণ কালী, ভদ্র কালী, গুহ্যকালী, শ্যামা কালী ইত্যাদি। প্রত্যেক রূপের পূজা পদ্ধতি আলাদা। দেবীর রূপ সম্পর্কে অধিকাংশ জনমানসে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, দেবীর পদতলে শায়িত পুরষ দেবতাটি আসলে দেবীর স্বামী শিব, আর ভুলবশত দেবী তাঁকে পদাঘাত করেছেন বলে লজ্জায় তিনি জিভ বার করেছেন। কালী শব্দের অর্থ হলো কালকে নিয়ন্ত্রন করছেন যিনি। সময়কে বেঁধে রাখা যায় না কাজেই যিনি সময়ের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি জগতের নিয়ন্ত্রক, এবং সর্বশক্তিমান ও বটে। আবার , “কাল” অর্থে মহাকাল বা মহাদেবকে বোঝায়। শাক্ত দর্শন অনুযায়ী, দেবী শ্মশানবাসিনী। অর্থাৎ মানব জীবনের অন্তিম স্থলেই তাঁর অবস্থান, দেবীর পদতলে শায়িত দেবতাটি আসলে মহাদেব নন।
তিনি একটি সাধারণ শবদেহ, কিন্তু দেবীর পায়ের ছোঁয়ায় সে শিবে পরিণত হয়েছেন। জগতের সবকিছু দেবীর শক্তির কাছে এতটাই তুচ্ছ যে, তাঁর পায়ের ছোঁয়ায় শব শিবে পরিণত হচ্ছে, মানে মানুষের জন্ম মৃত্যুর নিয়ন্ত্রনও তাঁরই হাতে। দেবীর কোনো আদি অন্ত নেই, তিনি সবকিছুর মধ্যেই বিদ্যমান। কাজেই তাঁর কোনো স্বামী সন্তান পরিবার নেই। তিনি জগতের অধিশ্বরী। তাঁর লোল জিহ্বা ধ্বংসের প্রতীক, বিশ্বের যা কিছু বিভীষিকা ময়, অশুভ সেই সবকিছুকে তিনি গ্রাস করতে চাইছেন। তিনি অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠায় জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। জানা যায়, একদা দেবী ভদ্রকালী বঙ্গদেশের একাধিক পরিবারের কুল দেবী ছিলেন। বাংলার ডাকাত ও দস্যুকুলদের ও প্রধান আরাধ্যা দেবী ছিলেন তিনি। বঙ্গদেশের ইতিহাস থেকে জানা যায় অনেক জমিদার পরিবার পূর্বে দস্যু ও ডাকাত ছিলেন।
পরে সমৃদ্ধিশালী হয়ে দস্যুবৃত্তি ছেড়ে কেউ বাণিজ্য কেউবা জমির মালিকানা সূত্রে জমিদারে পরিণত হন। তাঁরা সবাই শক্তির উপাসক ছিলেন। ভদ্রকালী ছিলেন তাঁদের প্রধান আরাধ্যা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কে এই দেবী ভদ্রকালী?
ভদ্রকালী কি?
ইতিহাসের দলিল হিসেবে বাংলার টেরাকোটার মন্দিরে দুর্গা থেকে কালী আর কালী থেকে দুর্গার বিবর্তন আজও বিরাজমান। এই বাংলায় কালীপুজো মূলত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে। এরপর উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্রেরই পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার কিছু জমিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজোর জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে ওঠে। কোথাও কালীর ডান পা আবার কোথাও কালীর বাঁ পা এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। বিগ্রহে কালীর ডান পা এগিয়ে থাকলে তিনি তখন দক্ষিণা কালী। আর যখন তাঁর বাঁ পা এগিয়ে থাকে তখন তিনি বামা কালী। আর এই দুই রূপেই পুজিত হন মা কালী।
পড়ুন: বাহক ঈদ সংখ্যা ২০২৩
পড়ুন: বাহক শারদীয়া সংখ্যা / পুজো ম্যাগাজিন ১৪২৯
PDF টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন – বাহক ঈদ সংখ্যা ২০২৩
ঈদ সংখ্যা কেমন লাগলো, ফেসবুক পেজ ছাড়াও নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আপনার নাম দিয়ে মতামত দিতে পারেন।
এছাড়াও আমাদের পূর্বে প্রকাশিত কিছু সংখ্যা সমূহের Pdf নিচে দেওয়া হল।