বাহক নিউজ় ব্যুরো: বর্ষার সময় চারিদিকে শুধুই মশা ও মশা। বাড়ি-ঘরে জমা জল না থাকলেও, নালা-নর্দমার কারণে চারিদিকে শুধুই মশার উৎপাত। এদিকে, মশা তাড়ানোর কয়েল বা ধূপ ব্যবহার করলেও সবই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য, সেই কয়েল বা ধূপের ধোঁয়া শেষ, মশার আগমন আবার অবধারিত। অপরদিকে, বায়ুদূষণ যা সেটা নিয়ে তো ভাবাই হয় না। তবে, সবাইকে তাক লাগিয়ে বাংলার এক অধ্যাপক এমন একটি উপায় বের করেছেন, যেটিতে যেমন একদিকে বায়ুদূষণ হবে না, অপরদিকে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে এবং মশার উৎপাতও কমবে। রহড়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ সেন্টেনারি কলেজের এক গবেষক-অধ্যাপক ডাঃ স্বপন ঘোষ।

উল্লেখ্য, তিনি তাঁর গবেষণা বিশ্ববন্দিত নেচার পত্রিকার সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত করেছেন। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের আবিষ্কার করেছেন, যেটা মূলত মশাখেকো। কোনো সুপারহিরো মুভির মতো এন্ট্রি দিয়ে মাত্র আধঘন্টার ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিকারী মশার লার্ভা ধ্বংস করে দেবে। এই সমস্ত ক্ষতিকারক মশাগুলির লার্ভা ধ্বংস করার জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গাতে দিতে হবে মাত্র এক ফোঁটা ছত্রাকের সলিউশন। নিঃসন্দেহেই এই আবিষ্কার যুগান্তকারী আবিষ্কার।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

এই বিশেষ সলিউশনের নাম ‘ট্রাইকডার্মা অ্যাসপেরেলাম’। এই ছত্রাক এমনিতে কীটনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অধ্যাপক স্বপন ঘোষ ও তাঁর ছাত্ররা এই গবেষণা প্রায় ৪ বছর ধরে চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। গবেষণা চলাকালীন তাঁরা লক্ষ্য করলেন যে, এই ছত্রাক সমস্ত রকমের মশার লার্ভাই মারতে সক্ষম, একই সঙ্গে পরিবেশবন্ধুও, কোনো প্রকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি। গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারা গেছে যে, তিনি এই গবেষণা মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া উত্তর ২৪ পরগনা সহ একাধিক জায়গায় করেছিলেন। এই গবেষণার মধ্যে তাঁরা একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড মার্কার’ তৈরি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে মশার জন্মানোর মাপকাঠি। ঠিক কত পিএইচ, কত তাপমাত্রা মশার ‘বীজতলা’ তৈরি করার জন্য আদর্শ, তা সমস্ত কিছুই তিনি তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন।

এইটার কার্যপ্রণালীও বর্ণনা করেছে তিনি তাঁর গবেষণাপত্রে। ওই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রথমে এই ছত্রাকের রেণু তথা স্পোর লার্ভার গায়ে সেঁটে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে মশার লার্ভার বংশ ধ্বংস করার কাজ শুরু হয়। যাতে সহজে বিনা বাধায় ওই ছত্রাক লার্ভার গায়ে আটকে যায়, সেইজন্য এক বিশেষ প্রকারের প্রোটিন নির্গত করে নিজের দেহ থেকে। ওই ছত্রাক লার্ভার গায়ে আটকে যাওয়ার পরে অঙ্কুরিত হবে এবং অঙ্কুরিত হওয়ার মাধ্যমে একটি নল তৈরি হবে। এই নলের মাধ্যমেই রাসায়নিক এবং কাইটিনেজ-প্রোটিয়েজ নামক দুটি উৎসেচক বেরিয়ে আসবে। বেরিয়ে আসা ওই উৎসেচকগুলি লার্ভার কোষপ্রাচীর ভেঙে, সেই লার্ভার মধ্যে ঢুকে সেইটার ইমিউনিটি সিস্টেম তথা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করবে এবং ধ্বংস করবে। অবশেষে তৈরি হবে অনুসূত্র তথা মাইসেলিয়াম এই অনুসূত্রই লার্ভার বংশ ধ্বংস করার জন্য দায়ী। অধ্যাপক স্বপন ঘোষের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ছত্রাক থেকে যে রাসায়নিক মিশ্রণ (হেক্সাডেকানইক অ্যাসিড, পাইরেন, কুইনোলিন প্রভৃতির সম্মিলিত যৌগ) নিঃসৃত হয়, সেটাই লার্ভা শেষ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য, মশার লার্ভা ধসংস করার বেশি পরিমাণ দ্রবণের প্রয়োজন হবে না, এই বিশেষ ছত্রাকের মাত্র ১ ফোঁটা সলিউশনই যথেষ্ট।