বাহক নিউজ় ব্যুরো : তালিবান শাসনের শুরুটা ছিল শান্তিপূর্ণ। এরপরই এদের আসল রূপ আফগানিস্তানকে নরকে পরিণত করেছিল।

 

১৯৯২ সালে আফগানিস্তানে পতন হয় বামপন্থী সরকারের। এরপর গৃহযুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে আফগানিস্তান। এই সময় ‘আবির্ভাব’ ঘটে ‘তালিবান’দের। শুরুতে আফগানরা তালিবান গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছিল। কারণ তারা চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্তি চাইছিল, তালিবানরা বলত শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল তালিবানরা। ক্ষমতায় থাকার সময় তালেবান শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করেছিল। কেমন ছিল তালিবানদের শাসন? জেনে নেওয়া যাক।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

 

অ-পশতুন জাতিগোষ্ঠীর মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া হতো পাকিস্তানে বা সৌদি আরবে। দাসীর জীবন ছিল বিক্রি হয়ে যাওয়া মেয়েদের। দাসত্বের চেয়ে আত্মহত্যাকে বেছে নিত অনেক মেয়ে। ১৯৯৯ সালে শোমালি সমভূমিতে তালিবানের আক্রমণে ৬০০-এর বেশি নারীকে অপহরণ করা হয়েছিল। স্থানীয় তালিবান বাহিনীর সঙ্গে আল-কায়েদার জঙ্গিরাও ছিল এই কুকাজে।

 

তালিবানরা নারীদের শিক্ষিত হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ফলে মেয়েদের স্কুল-কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মহিলাদের বাড়ি থেকে একা বেরোতে পারতো না, সাথে একজন পুরুষ আত্মীয় অথবা স্বামীকে সঙ্গে রাখতে হতো। হিজাব ও বোরখা পরতে হতো, যাতে শরীরের কোনো অংশ দেখা না যায়। এই নিয়মগুলো অমান্য করলে প্রকাশ্যে মারধর করা হতো। কোনো পুরুষ চিকিৎসক কোনো মহিলার চিকিৎসা করতে পারতেন না।

 

হিন্দু ও শিখদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করত তালিবানরা। অমুসলিমদের উপাসনালয় নির্মাণ করবার অনুমতি ছিল না, তাদেরকে ধর্মান্তরিত করা হতো, এর ফলে কমে গিয়েছিল অমুসলিমদের সংখ্যা। অমুসলিমরা কোনো মুসলমানের সমালোচনা করতে পারত না। অমুসলিমদের ছাদে হলুদ কাপড় লাগিয়ে তাদেরকে অমুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। অমুসলিমরা মুসলমানদের সঙ্গে একসাথে বসবাস করতেও পারত না। অমুসলিম মহিলাদের হলুদ পোশাক পরতে বলা হতো যাতে মুসলমানদের তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সুবিধা হয়। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মপ্রচারে মৃত্যু ছিল নিশ্চিত।

 

এভাবেই বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর হামলা চালিয়েছে তালিবানরা

পাঁচ বছরে আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক স্কুল ধ্বংস করে ফেলেছিল তালিবানরা। একইসঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর অত্যাচার চালায়। শত শত শিক্ষক নিহত হয়েছিল এই পাঁচ বছরে। পাবলিক লাইব্রেরির ৫৫,০০০ এরও বেশি বই এবং পুরাতন পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করে তালিবানরা। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরের প্রায় ৩০০০টি শিল্পকর্ম ধ্বংস করা হয়। এভাবেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আফগান সংস্কৃতিকে। সমস্ত ধরনের সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয় এবং বেশ কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পীকে হত্যাও করা হয় এই পাঁচবছরে। ফুটবল, ঘুড়ি ওড়ানো, টেলিভিশন, সিনেমা এবং দাবা সহ বিনোদনমূলক কাজ এবং খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এই সময়ে।

 

বিমানের ডানায় উঠে কেন কোনো মানুষকে দেশ ছাড়তে চাইতে হয়, সেটি উপলদ্ধি করতে পারা যায়। আফগানদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।