বাহক নিউজ় ব্যুরো: তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি সহ একাধিক নেতার উপস্থিতিতে কালীঘাটের বাড়ি থেকে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে আজকের অনুষ্ঠান। কোভিড পরিস্থিতির জন্য গতবছরের মত এ বারও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হল। আজ দুপুর দু’টোর সময় কালীঘাটের বাড়ি থেকে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে যেন দেখা যায় অন্য মমতাকে৷ বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্মৃতির সরণী বেয়ে ছাত্র রাজনীতির নস্টালজিক দিনগুলিতে ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। দারিদ্র, অবহেলা, কষ্ট, লাঞ্ছনা, মার, অপমান আর অনশনের কথা উঠে এসেছে তাঁর আজকের বক্তৃতায়৷ কথায় কথায় উঠে আসে বাবার মৃত্যুর পর সেই সংগ্রামী জীবনের কথা, দারিদ্র আর স্বপ্নের দ্বৈরিথ পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবার সেই অমসৃণ যাত্রার কথা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রাজ্য সরকারের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী’র মত প্রকল্পগুলির স্বার্থকতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান৷ এদিন, ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে বড় ঘোষণা করলেন তিনি। এবার থেকে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ’শো জন ছাত্রছাত্রী খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন৷ পড়ুয়াদের এই ইন্টার্নশিপে উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যুক্ত করা হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মিলবে সার্টিফিকেটও।
তৃণমূল নেত্রী বলেন- ” আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষা, শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আজকে মেয়েরা পিতা-মাতার ঘাড়ের বোঝা নয়। আমাদের সকলের গর্বের কন্যাশ্রী তারা। পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে সুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায়।”
পাশাপাশি রাজ্য শিল্প, প্রযুক্তি ও শিক্ষায় কতখানি রগিয়ে গিয়েছে তিনি পরিসংখ্যান সহ সেই বিবৃতি দেন৷ তিনি জানান- “আইটিতে তৈরি হচ্ছে টাটা রিসার্চ সেন্টার। একশ একর জমিতে বাংলা সিলিকন ভ্যালি তৈরি হয়েছে, আরো একশ একর দেওয়া হবে। তৈরি করা হয়েছে ৫৪০ টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও বিশ্ববাংলা শোরুম, তথ্য প্রযুক্তির সুফল সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আঠারোটি আইটি পার্ক নির্মাণ হয়েছে৷ আরো চারটি নির্মাণ করা হচ্ছে, গতিধারা প্রকল্পে ৪৪ হাজার বেকার যুবক যুবতীকে গাড়ি কেনার টাকা দিয়েছে আমাদের সরকার।”
কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারীকরন নিয়ে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন –
“পৃথিবীতে অন্য কোন দেশে গেলে এয়ার ইন্ডিয়ার লোক দেখে গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে, বিক্রি করে দিতে হবে?হাজার হাজার গরীব চাষী ভাইরা লাইফ ইন্সুরেন্স এর টাকা রেখেছেন বিক্রি করে দিতে হবে?জেনারেল ইন্সুরেন্স এ টাকা রেখেছেন বিক্রি করে দিতে হবে?কোল বিক্রি করতে হবে? রেল বিক্রি করতে হবে? স্টেশান বিক্রি করে দিতে হবে?”অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানোয় ও ইডি জারি হওয়া নোটিশ নিয়েও বিজেপিকে একহাত নেন তিনি। হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন-” একটা ইডি দেখালে আমি বস্তা ধরে ইডির কাছে কাগজ পাঠাব। দেশটাকে ড্যামেজ করে সব ম্যানেজ করা যায় না। রাজনীতি প্রতিহিংসার নয়।”
সর্বভারতীয় রাজনীতি প্রসঙ্গে বিজেপি সরকার’কে উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা ও আসাম ইস্যুতে তুলোধনা করলেন নেত্রী। “প্রতিদিন ওরা ত্রিপুরায় মারছে, আসামে আমাদের এমপিদের ঢুকতে দেয় নি৷ হাসরাথ এ এমপি পাঠিয়েছি, ঢুকতে দেয় নি৷” – অভিযোগ তৃণমূল সুপ্রিমোর৷
একুশের মহারণে সাফল্যের পর এবার যে সর্বভারতীয় স্তরে সংগঠন শক্ত করাই যে লক্ষ্য তা আজকের সভামঞ্চ থেকে আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন দিদি৷ সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন- “পশ্চিমবঙ্গে খেলা হচ্ছে ত্রিপুরায় আসামের সারা ভারতবর্ষে খেলা হবে ২০২৪ এ খেলা হবে দিল্লিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।”
এদিন নেত্রী তার পুরনো প্রতিদ্বন্দী সিপিএম এবং অধুনা বিরোধী বিজেপি কে
একসঙ্গে কাঠগড়ায় তুললেন, একেবারে খুনের অভিযোগে। সভা যতই শেষের দিকে অগ্নিকন্যার বক্তব্যের ধারালো দিকটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল৷ তিনি তীব্র কটাক্ষ করে জানান- “আমাকে খুন করবে? আগেও সিপিএম অনেকবার চেষ্টা করেছে। তোমরাও কম চেষ্টা করোনি ;এবারে নন্দীগ্রামে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলে৷ রাজনৈতিকভাবে লড়ার ক্ষমতা নেই তাই খুন করার চক্রান্ত করছে।”
এদিনের সভা থেকে ছাত্র-যুব’কে রাজনীতিতে আসার জন্য উজ্জীবিত করেন নেত্রী। তিনি একটি সুস্থ, সুন্দর ও সংস্কৃতিবান রাজনৈতিক আঙিনা গড়ার লক্ষ্যে ছাত্র-যুবার উদ্দ্যেশ্যে আহ্বান জানান৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে ভারতের প্রতিটি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পৌঁছে দিতে আর্জি জানান তিনি। এদিন সভা থেকে ছাত্র-যুব দের উদ্দেশ্যে তিনি বিশেষ পরামর্শ দেন।
ছাত্র-যুব, তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির প্রাঙ্গনে আসার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন- “আমাদের জেনারেশন টা কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করেই উঠে আসা। তাই আমি কখনও দিনটির কথা ভুলব না৷ আমি চাই এ আরও তিনটি প্রজন্ম যেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসে৷”