rakhi bandhan Rabindranath Tagore and viceroy Lord Curzon in one picture, this picture also has hindu muslim harmony too
রাখী বন্ধন, গ্রাফিক্স: বাহক

Bahok News Bureau:  রাখী বন্ধন (Rakhi Bandhan) উৎসব, এমন এক উৎসব, যা দুই মানুষকে বেঁধে দেয় বিশেষ বন্ধনে। শ্রাবণ মাসের শেষদিনে পূর্ণিমা তিথিতে এই দিন পালিত হয়। ২০২৩ সালে যা পড়েছে ৩০ই আগস্ট তারিখে (Rakhi Bandhan 2023)। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই দিনটি মূলত ভাই, বোন, দাদা, দিদিদের জন্য ‘রক্ষার’ উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়। এই বিশেষ বন্ধন ‘রক্ষার’ বন্ধন হতে পারে, আবার হতে পারে পারে ‘ভ্রাতৃত্বের’ বন্ধন। পরাধীন ভারতে রাখী বন্ধন পায় আরেক পরিচয়। সেই সময়ে ‘রাখী পূর্ণিমায়’ (Rakhi Purnima) শুধুমাত্র ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করার উদ্দেশ্যেই নয়, এক মহৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য সার্বিকভাবে পালিত হয়েছিল ‘রাখী বন্ধন উৎসব’।

বঙ্গভঙ্গ আইন ও বাংলা:

সালটা ছিল ১৯০৫। সেই বছরে রাখী পূর্ণিমার তারিখটি ছিল ১৬ই অক্টোবর। ওই বছরে একই দিনে আবার বলবৎ হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ আইন, ১৯০৫। উল্লেখ্য, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন (Viceroy Lord Curzon) বঙ্গভঙ্গ আইনের কথা ঘোষণা করেন ১৯শে জুলাই, ১৯০৫-এ। আর এই আইন কার্যকরী হয় ১৬ই অক্টোবর তারিখে, যা কিনা ওই বছরে রাখি পূর্ণিমার (Rakhi Purnima) দিনে। যার ফলে, উৎসবের কণ্ঠে বিরহের সুর একইদিনে বেজে ওঠার অবস্থা হয়েছিল।তবে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) উদ্যোগে এই দিনটি এমনভাবে উদযাপিত হল, যা স্মরনীয় হয়ে থেকে গেল স্বর্ণাক্ষরে। যা আজও মনে করা হয় তাঁর মহৎ উদ্দেশ্যের জেরে।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

আরও পড়ুন: Saikhom Mirabai Chanu: বার্মিংহাম কমনওয়েলথে স্বর্ণপদক জয়ী প্রথম ভারতীয়র জীবনকাহিনী

১৯০৫ সালে রাখীবন্ধন (Rakhi Bandhan) ও বঙ্গভঙ্গ (Partition of Bengal) বিরোধী আন্দোলন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯০৫ সালে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরিচয় ছাড়াও প্রথমবার পরিচয় পায় সম্প্রীতির উৎসবরূপে। ওই বছরে দেশজুড়ে বইছিল সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার আবহ, এর মাঝে আবার জুলাই মাসে ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করেন। বহু ঐতিহাসিকদের মতে, সেই সময়ে ব্রিটিশদের চাপে ফেলেছিল অবিভক্ত বাংলা। সেই সময়ে বাংলায় জাতীয়তাবাদ আন্দোলন চরমে ছিল। এই অবস্থায় সংগঠন দুর্বল করতে ও বিভেদের নীতি আরও মজবুত করতে ধর্মের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করে।

১৯০৫ সালের জুন মাসে আসামে লর্ড কার্জন (Lord Curzon) ও মুসলিম প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বৈঠক সম্পন্ন হয়। এই বৈঠকের পরেই বঙ্গভঙ্গ আইন কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। কার্জনের মতে, মুসলিম আধিপত্যযুক্ত এলাকা যেমন আসামের (Assam) কিছু অংশ ও শিলহেটকে (Sylhet) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বার্থে হিন্দু আধিক্যযুক্ত এলাকা তথা বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ওড়িশা থেকে আলাদা করতে পারলে হিন্দু-মুসলিম জোটে ফাটল দেখা দেবে, যা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মন্দা আনবে। যদিও, আপাতত সেই সময়ে ব্রিটিশের মনোকামনা পূরণ হতে পারেনি। বিভাজনের মাঝে আরওই ঐক্যের সুর বেজে উঠেছিল বাংলাজুড়ে।

আরও পড়ুন: দ্রৌপদী মুর্মু: সাধারণ দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এক নারীর যুদ্ধকথা

ঐক্যের প্রতীক, রাখী বন্ধন উৎসব: 

বঙ্গভঙ্গ আইনের বিরোধিতা করেন রবীন্দ্রনাথ সহ একাধিক নেতা। এই বিরোধিতারই অংশরূপে রবি ঠাকুর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে ‘রাখী বন্ধন উৎসব’ (Rakhi Bandhan Utsav) পালন করার কথা ঘোষণা করলেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, সেই সময়ে সাধারণ মানুষ কবিগুরুকে নিরাশ করেননি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন বহু মানুষ। কবিগুরুর ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতা (Kolkata), ঢাকা (Dhaka), শিলহেটে শয়ে শয়ে মানুষ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে একে অপরকে রাখী বাঁধতে শুরু করে। যা বিভাজনের মাঝেও ঐক্য (Unity) ও সম্প্রীতির (Communal Harmony) বার্তা দিয়েছিল।

মৈত্রেই দেবী রচিত ‘Tagore By Fireside’, (‘মনগুপ্তে রবীন্দ্রনাথ’-র ইংরেজি অনুবাদ)-এর পুস্তক পর্যালোচনায় (Book Review) আনন্দময়ী মজুমদার (A Majumdar) উল্লেখ করেন, “বাংলায় স্থিত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তিনি এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে (religious tradition) সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত করেছিলেন এবং বঙ্গভঙ্গকে রদ করতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন”।

বঙ্গভঙ্গ রদ: 

৬ বছর ধরে একটানা প্রতিবাদ চলে দুই ধর্মের পক্ষ থেকেই। এই প্রতিবাদ মোটেই আগুনের ফুলকির মতো ছিল না। এই প্রতিবাদের তীব্রতা ছিল অগ্নিশিখার মতো। পশ্চিম ও পূর্ব, দুই বঙ্গেরই উভয় ধর্মের মানুষের দৌলতে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বাংলা জুড়ে। যার ফলে অবশেষে ১৯১১ সালে রদ হয় বঙ্গভঙ্গ আইন।