আশ্চর্য ধরনের জিনিস আবিষ্কারের দিক থেকে চীনের নাম সবার আগে আসে। চীন ইতিমধ্যে নিজস্ব কৃত্রিম সূর্য বানিয়ে সবাইকেই অবাক করে দিয়েছে। এবার মহাকাশে ধানও প্রস্তুত করে দেখিয়ে দিল চীন। চীন এই ধানকে নাম দিয়েছে ‘স্পেস রাইস’। এই ‘স্পেস রাইস’-এর বীজ চীন বিগত বছরের নিজস্ব চন্দ্রযান-এর মাধ্যমে মহাকাশে পাঠিয়েছিল। অবশেষে মহাকাশযানের মাধ্যমে ৪০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট প্রায় ১,৫০০টি ধানের বীজ পৃথিবীতে এলো।
ফেরত আসা প্রত্যেকটা বীজই দক্ষিণ চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত ক্ষেতে বপন করা হয়ে গেছে। মহাজাগতিক বিকিরণ এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সংস্পর্শে রাখার পরে ওই বীজগুলিকে পৃথিবীতে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং-এ অবস্থিত ‘দক্ষিণ চীন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মহাকাশ প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রে ‘স্পেস রাইস’-র প্রথম ফসল কাটা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই স্পেস রাইসগুলির বীজ প্রায় ১ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রের উপনির্দেশক গুয়ো তায়ো জানিয়েছেন যে, বীজগুলোকে প্রথমে গবেষণাগারে প্রস্তুত করা হবে, তারপরেই সেগুলিকে ক্ষেতে রোপণ করা হবে। মহাকাশের আবহাওয়ায় অনেকটা সময় থাকার ফলে এই বীজগুলির বেশ কিছু গুনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

প্রসঙ্গত, মহাকাশ থেকে বীজগুলোকে পৃথিবীতে আনার পর এইগুলোর ফলন আরো ভালো হয়েছে। চীনে এই ধরণের গবেষণা শুধুমাত্র ধানের সঙ্গেই করা হয়নি অন্যান্য ফসলের সঙ্গেও করা হয়েছে। চীন ১৯৮৭ সাল থেকেই চাল ও অন্যান্য ফসলকে মহাকাশে পাঠানোর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এগুলোর ফলন সাধারণের তুলনায় ভালো হয়। যদিও এ সম্বন্ধে এখনো চূড়ান্ত তথ্য জনসমক্ষে আসেনি। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন এখনও পর্যন্ত ২০০-এরও বেশি প্রকারের ফসলের সঙ্গে এই ধরনের গবেষণা করেছে। উল্লেখ্য, গবেষণার এই তালিকায় কার্পাস থেকে শুরু করে টমেটোও রয়েছে।
চীনের একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, ২০১৮ সালে ২.৪ মিলিয়ন হেক্টর এরও বেশি এলাকা সম্পন্ন ক্ষেতে মহাকাশ থেকে আনা বীজের ফলন ঘটানো হয়েছে। চীনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই চালকে “স্বর্গের চাল” নামে আখ্যায়িত করেছেন। গ্লোবাল টাইমস-এর তরফে জানানো হয়েছে যে, প্রায় ৩-৪ বছর পরে এই ধরনের বীজ সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছাবে।
প্রকৃতপক্ষে চীনের পরিকল্পনা হল চাঁদে নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করা। এছাড়াও চিন অন্তরীক্ষে ফসল উৎপাদনের জন্য গ্রীনহাউস তৈরি করার কথাও ভাবছে। চীন প্রায় ১৯টি গবেষণায় জড়িত সংগঠনকে চাঁদের মাটিও সরবরাহ করেছে। এই তালিকায় রয়েছে চীনের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি, চীন ভূ-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং সন-ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।