Table of Contents
Bahok News Bureau: সারা বিশ্বে আমিষভোজী মানুষের চেয়ে নিরামিষভোজী মানুষের সংখ্যা অনেক কম। বেশিরভাগ আমিষভোজী মানুষই মাংস খেতে বেশ পছন্দ করেন। আমাদের দেশে পোলট্রি এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস মানুষ খেয়ে থাকেন। আপনি কি কোনোদিন কড়কনাথ মুরগির মাংস খেয়েছেন কিংবা চোখে দেখেছেন এই মুরগি? ভারতের নানা প্রান্তের সঙ্গে আমাদের রাজ্যে এই মুহূর্তে কড়কনাথ চিকেনের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এমনকী, এই ব্যবসায় নেমে পড়েছেন খোদ ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁর রাঁচির খামারবাড়িতে তিনি চাষ করছেন এই কড়কনাথ মুরগি। তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন, এই মুরগির ফার্ম খুলবেন তাহলে খুব সহজেই অল্প বিনিয়োগ করে করতেই পারেন এই ব্যবসা (Small Investment Business Idea)।
কড়কনাথ মুরগির বিশদ বর্ণনা:
ইন্দোনেশিয়ায় প্রথম এই প্রজাতির মুরগি পাওয়া যায় এবং সেখানে এই মুরগির নাম ছিল ‘অ্যায়াম কেমানি’। মধ্যপ্রদেশের কিছু আদিবাসীর হাত ধরে ভারতে আসে এই মুরগি। তারাই ইন্দোনেশিয়া থেকে এই মুরগি নিয়ে এসে একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতির মুরগি সৃষ্টি করে। দেশের মধ্যে এই মুরগি প্রথম পালন শুরু হয় মধ্যপ্রদেশে। তারপরেই হাইব্রিড মুরগির নামকরণ করা হয় ‘কড়কনাথ মুরগি’। প্রসঙ্গত, এই মুরগির সমস্ত অংশই কিন্তু কালো। অর্থাৎ এই মুরগির মাংস, হাড়, চামড়া- সবকিছুই কালো কুচকুচে। এমনকী এই মুরগির ডিমও কিন্তু কালো। এইজন্য এই কড়কনাথ চিকেন গ্রামবাংলায় কালো মুরগি হিসেবে পরিচিত।
কোথায় কোথায় পাওয়া যায় কড়কনাথ মুরগি?
কড়কনাথ মুরগি বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথমবার মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলায় এটির উৎপাদন শুরু হয়। তারপরে ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, এমনকী, পশ্চিমবঙ্গেও এই মুরগির চাষ শুরু হয়।
কড়কনাথ মুরগির পুষ্টিগুণ
১৯৭৮ সালে মধ্যপ্রদেশে এই প্রজাতির মুরগির প্রথম প্রতিপালন শুরু হয় কেন্দ্রের তরফে। একটা সময় এই মুরগি খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও পরবর্তীতে এর পুষ্টিগুণের কারণে ধীরে ধীরে এই মুরগির জনপ্রিয়তা বেড়েছে সারা ভারতে। এমনকী, ব্যবসায়ীদের জন্য ‘কালো সোনা’ হয়ে উঠেছে এই কড়কনাথ মুরগি। এই ব্যবসা থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কী এমন পুষ্টিগুণ, যার জন্য এতটা জনপ্রিয় কড়কনাথ মুরগি? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
১) প্রোটিন: কড়কনাথ মুরগিতে প্রোটিন থাকে ২৫ থেকে ২৭ শতাংশের কাছাকাছি।
২) চর্বি: কড়কনাথ মুরগিতে চর্বি থাকে মাত্র ০.৭৩ থেকে ১.০৩ শতাংশের কাছাকাছি।
৩) কোলেস্টেরল: কড়কনাথ মুরগিতে কোলেস্টেরল থাকে ১৮৪.৭৫ মিলিগ্রাম।
৪) লিনোলেইক অ্যাসিড: কড়কনাথ মুরগিতে এই অ্যাসিডের পরিমাণ থাকে ২৪ শতাংশ।
৫) এছাড়াও এই মুরগিতে রয়েছে ১৮ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যসিড, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২, সি এবং ভিটামিন ই। আজকাল স্নায়ু রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে এই মুরগি ব্যবহার হয়। এছাড়া এই মুরগির মাংস বা ডিম খেলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়, হার্ট সুস্থ থাকে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি এই মুরগি রক্তাল্পতার ঝুঁকি রোধ করে, হাড় শক্তিশালী করে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে, যাঁদের অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওআর্থারাইটিস রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য কড়কনাথ মুরগি অত্যন্ত লাভজনক। ত্বকে পুষ্টির জোগান, মাথা ব্যথা এবং হাঁপানির রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কড়কনাথ মুরগি লাভদায়ক।
সরকারি সহায়তা
এই মাংসের উপকারিতার কথা মাথায় রেখে কড়কনাথ মাংসের ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকারের তরফ থেকেও প্রত্যেক স্তরে সাহায্য করা হয়।
মুরগির ডিম বা মাংসের দাম কত?
ভারতীয় বাজারে ৫০ টাকায় কড়কনাথ মুরগির একটি ডিম বিক্রি হয়। অন্যদিকে একটি মোরগ কিংবা এক কেজি মুরগির মাংস বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। আর এই প্রজাতির মুরগির একদিনের একটি ছানার মূল্য প্রায় ৭০ টাকা। তবে কিছু কিছু জায়গায় আপনারা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা প্রতি কিলো দরে এই মুরগির মাংস কিনতে পারেন।
কীভাবে শুরু করবেন কড়কনাথ চিকেনের ব্যবসা ? (Small Investment Business Idea)
কড়কনাথ মুরগির ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে সঠিক জায়গা এবং সঠিক ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে (Small Investment Business Idea)। সঠিক জায়গা বেছে নিয়ে তার পরেই আপনি কোনও একটি বিশেষ জায়গা থেকে কড়কনাথ মুরগির ছানা কিনুন। যেকোনও ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি থেকে এই মুরগির ছানা আপনি কিনতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় কোনও ফার্ম থেকেও এই মুরগির ছানা কেনা যেতে পারে। অনলাইনে অনেক সময় কড়কনাথ চিকেনের ছানা বিক্রি হয়। তবে সেক্ষেত্রে ছানা কেনার আগে অবশ্যই সেই মুরগি সুস্থ কি না, সেটা দেখে নেবেন। মনে রাখবেন, সময়ে সময়ে কিন্তু মুরগির ছানার ভ্যাকসিনেশন করানো প্রয়োজন, নাহলে আপনার মুরগির ছানা অসুস্থ হতে পারে। কড়কনাথ মুরগির যদি আপনি ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনাকে ন্যূনতম ১০০টি মুরগিছানা নিয়ে শুরু করতে হবে। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১৫০ বর্গফুট জায়গা।
যদি আপনি ১০০০টি মুরগির ছানা নিয়ে শুরু করেন, তাহলে আপনাকে ১,৫০০ বর্গফুট জায়গা নিতে হবে। ফার্ম সবসময় গ্রাম অথবা শহরের বাইরে এবং মূল সড়কের থেকে অনেকটা দূরে হতে হবে। সেখানে যেন পরিবেশ দূষণ খুব একটা বেশি না হয় এবং আশপাশে সবুজের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে হ্যাঁ অবশ্যই সেখানে জল এবং বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। সম্ভব হলে ফার্ম একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় করুন, যেখানে জল জমার সম্ভাবনা থাকবে না। জল জমলে কড়কনাথ মুরগি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ফার্মে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা হালকা আলো এবং পর্যাপ্ত বায়ু প্রবেশ করতে হবে। একের বেশি ফার্ম হলে কখনওই এই সমস্ত ফার্ম কাছাকাছি রাখবেন না। তবে খেয়াল রাখবেন, যাতে একই জাতির ছানা সবসময় একই শেডের তলায় থাকে। অবশ্যই মনে করে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে জলের পাত্র পরিষ্কার করুন।
কত টাকা লাভ হবে?
কড়কনাথ মুরগি পালন করার জন্য কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে যদি আপনি ছোট মুরগি ক্রয় করেন এই কড়কনাথ মুরগি পালন করেন তাহলে আপনার লাভের পরিমাণ বেশ ভালোই হবে। ৭০ কিংবা ১০০ টাকা দিয়ে আপনি একটি মুরগির বাচ্চা কিনতে পারবেন। আর সেই মুরগি বড় হলে বাজারে একেকটি কড়কনাথ মুরগির দাম হবে প্রায় ৩০০০-৪০০০ টাকা। মাংসের দাম মোটামুটি ৫০০ থেকে ৭০০ কিংবা কোনও কোনও জায়গায় ৮০০ টাকা হতে পারে। তবে, এই মাংসের চাহিদা শীতকালে বৃদ্ধি পায়। এই কারণে সেই সময় দাম পৌঁছে যায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তাই আপনি যদি শুধুমাত্র শীতকালে ভালোভাবে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি খুব সহজেই ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন।
পড়ুন: বাহক ঈদ সংখ্যা ২০২৩
পড়ুন: বাহক শারদীয়া সংখ্যা / পুজো ম্যাগাজিন ১৪২৯
PDF টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন – বাহক ঈদ সংখ্যা ২০২৩
ঈদ সংখ্যা কেমন লাগলো, ফেসবুক পেজ ছাড়াও নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আপনার নাম দিয়ে মতামত দিতে পারেন।
এছাড়াও আমাদের পূর্বে প্রকাশিত কিছু সংখ্যা সমূহের Pdf নিচে দেওয়া হল।