বাহক নিউজ় ব্যুরো: লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে হঠাৎ ফোন ।ফোনে যে স্বামী জানালেন স্ত্রীকে খুন করেছি, মেয়ে জখম অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে। এই ফোন পেয়ে ৩৩/ সি মনোহর পুকুরের আবাসনের রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ পৌঁছায়। পুষ্পক অ্যাপার্টমেন্টের তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে পুলিশ দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বাজাজ।
তার স্বামী অরবিন্দ বাজাজ স্বীকার করেন যে তিনি স্ত্রীকে খুন করেছেন। চাবি সংক্রান্ত অশান্তির জেরে রাগের মাথায় স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে খুন করেন অরবিন্দ বাজাজ। একথা অরবিন্দ স্বীকার করেছেন । তবে নিজের কৃতকর্মের জন্যে এখন অনুতপ্ত অরবিন্দ। স্ত্রী ছড়ি ঘোরাতো মাথার ওপর আর এতেই মানসিক শান্তি নষ্ট হচ্ছিল অরবিন্দের। তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর অরবিন্দ তার মেয়ে অদ্বিকাকেও খুনের চেষ্টা করে । তাদের দু’জনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা প্রিয়াঙ্কাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেয়ে অদ্বিকা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি। স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত দু’বছর ধরে কর্মহীন ছিলেন অরবিন্দ
কিন্তু মেয়েকে খুনের চেষ্টা কেন করলেন? জানা গিয়েছে স্ত্রীকে খুন করতে যখন মরিয়া অরবিন্দ, একের পর এক শরীরে ছুরি চালাচ্ছিলেন তখন মেয়ে বাধা দেয়। তারপর স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে রাগের মাথায় মেয়েকে আক্রমণ করেন অরবিন্দ। পরে বাঁচানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ফোন করেন। পাশাপাশি ১০০ নাম্বার ডায়াল করে পুলিশের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
সমস্যাটা কোথায় ছিল? জেরাতে যা উঠে আসে তাতে অরবিন্দের বয়ান, দীপাবলীর জন্য প্রিয়াঙ্কাকে আলমারি থেকে তাদের পৈত্রিক বাসন বের করে দিতে বলেন অরবিন্দ । কিন্তু তখন প্রিয়াঙ্কা জানান তার কাছে চাবি নেই। উত্তর শুনে অরবিন্দ শশুরকে ফোন করেন। শশুর বলেন চাবি অন্য এক বন্ধুর কাছে আছে । এই চাবি নিয়ে অশান্তির জেরে খুন করা হয় প্রিয়াঙ্কাকে।
এখন প্রশ্ন সংসারের চাবি শ্বশুরবাড়িতে কেন থাকবে? পুলিশের কাছে অরবিন্দ জানিয়েছেন শশুর বাড়ি জামাই কে কন্ট্রোল করতে চাইত। তার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে সেখান থেকে চালনা করা হতো ।এমনকি ১৫ বছর ধরে শ্বশুরবাড়ি সিমেন্টের ব্যবসা কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন অরবিন্দ মাত্র ১৫০০০ টাকা বেতনে। এই টাকার মধ্যে সংসার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হতো। আলাদা ব্যবসা করতে চাইলে তাকে বাধা দেয় শ্বশুরবাড়ি । ফলে শ্বশুরবাড়ি ব্যবসা ছেড়ে দিতে হয়। তারপর থেকে কর্মহীন ছিলেন তিনি।
অরবিন্দের স্ত্রী এর আগে টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অরবিন্দের বিরুদ্ধে। তখন মামলা না হলেও বিয়েতে দেওয়া বাবার সম্পত্তি প্রিয়াঙ্কা তখন অরবিন্দের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়। শ্বশুর বাড়ি চাপ বাড়ছিল। যা সহ্য করতে পারছিলেন না অরবিন্দ। যার পরিণতি হলো এভাবে।
এই ঘটনায় খুন এবং খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে অরবিন্দ দুই ভাই বোন। দিদি থাকেন টালিগঞ্জে। বাবা প্রয়াত হয়েছেন আগেই। বাবার কেনা মনোহরপুকুর ফ্ল্যাটে থাকতেন অরবিন্দ। একদিকে আর্থিক অন্যদিকে মানসিক চাপ তাকে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে।