Digha Warren Hastings
Who founded Digha? : 'দীঘা'র প্রতিষ্ঠাতা কে?, দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?, দীঘার কথা ইতিহাসের পাতায়- প্রথম পর্ব, গ্রাফিক্স: বাহক

Bahok News Bureau: ভ্রমণ পিপাসুরা দীঘা যাননি, এমনটা খুব কমই দেখা গেছে। বর্ষাকালে সমুদ্রের বিশেষ রূপ দেখার জন্য ভ্রমণ অনুরাগীদেরও মন খারাপ হয়ে ওঠে। শয়ে শয়ে ভিড় জমে ওঠে দীঘার সমুদ্র তীরে যাওয়ার জন্য। হ্যাঁ বহু মানুষ, ইতিমধ্যে দীঘার (Digha) সৌন্দর্য্যের সাক্ষী হয়ে গেছেন। কিন্তু, এরই মধ্যে অনেক মানুষের মনে দীঘা তাঁর সৌন্দর্য্যের ছাপ আঁকতে পারেনি। বহু মানুষেরই এখন যাওয়া বাকি। তবে, কৌতূহলবশত দুই পক্ষেরই মনে কখনও না কখনও মনে প্রশ্ন জেগেছেই, এই দীঘার তো নিশ্চয় ইতিহাস রয়েছে! হঠাৎই নিশ্চয়ই এই সমুদ্র তীর বহু মানুষের প্রিয় এলাকা হয়ে ওঠেনি। এই প্রশ্ন যদি আপনার মনেতেও জেগে থাকে, তাহলে বলব এবার সেই কৌতূহলের অবসান ঘটতে চলেছে। এই আর্টিকলে জানতে পারবেন দীঘার সেই অজানা ইতিহাস।

আরও পড়ুন: Rakhi Bandhan: পরাধীন ভারতে রাখী উৎসব, রবীন্দ্রনাথ বিভেদের পরিবেশকেও বেঁধেছিলেন সম্প্রীতির বন্ধনে

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

দীঘা’র প্রতিষ্ঠাতা কে?/ দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? 

দীঘার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ওয়ারেন হেস্টিংস (Warren Hastings) । তিনি এই সমুদ্র উপকূলকে ‘পূর্বের ব্রাইটন’ (Brighton of the East) নামে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু, কলকাতা থেকে ১৮৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই দীঘা প্রথমে আজকের মতো জনপ্রিয় সমুদ্র তীর ছিল না, ছিল একটি সাধারণ গ্রাম, যেটা কিনা মাছ ধরার কাজের জন্য পরিচিত ছিল। তবে, পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতকে ওয়ারেন হেস্টিংস এই সাধারণ গ্রামটিকে খুঁজে বের করে, বিশেষ পরিচয় দিয়ে অসাধারণ করে তোলেন।

কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের প্রফেসর প্রেমানন্দ নিজ বই ‘হিজালিনামা’ (Hijalinama)-তে উল্লেখ করেন যে, ওয়ারেন হেস্টিংস অষ্টাদশ শতকে খুঁজে বের করেন এবং সরকারিভাবে এটি নথিভুক্ত করেন। সেই নথির ভিত্তিতে জানা গেছে যে, ওড়িশার জলেশ্বর চাকলার অধীনে বীরকুল (Bircool) নামের এক এলাকা ছিল। একটি ম্যাপ অনুযায়ী, ১৬৬৪-৬৮-এর মধ্যবর্তী সময়ে কাঁথি সাব-ডিভিশনের ২৪ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ‘নারীকূল’ (Narikul) নামক সমুদ্র উপকূলবর্তী এক গ্রাম অবস্থিত ছিল। ১৭০৩ সালে অঙ্কিত ম্যাপে নারীকূলের পাশে ‘বারিকূল’ (Barikool) নামক একটি নদী থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীকালে, আরও নতুন ম্যাপে এই এলাকাই ‘বীরকূল’ নামে পরিচয় লাভ করে।

আরও পড়ুন: Jennifer Lawrences on Donald Trump: ট্রাম্পের জয় জেনিফার লরেন্সের পরিবারে ফাটল ধরায়! জানুন কীভাবে?

হরিপদ মাইতির বই ‘মেদিনীপুর স্বাধীনতা সংগ্রাম’ (Medinipurer Swadhinata Sangram) অনুযায়ী ১৭৬০ সালে বাংলার নবাব মির কাশেম (Nawab Mir Kashim) কৃতজ্ঞতাবোধ প্রদর্শনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে (British East India Company) চাকলা মেদিনীপুর, চাকলা বর্ধমান, চাকলা চট্টগ্রামকে উপহার স্বরূপ দেন। পরবর্তীকালে ১৭৬৩ সালে ক্যালকাটা জোনের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হেড হন ওয়ারেন হেস্টিংস। সেই সময়ে চাকলা মেদিনীপুর ৫৪টি পরগণায় বিভক্ত ছিল। এরমধ্যেই একটি ছিল বীরকূল। ১৭৬৪ সালে বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস চাকলা ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলের লিজ নিতে ব্যর্থ হন। তখনই তিনি লক্ষ্য করেন যে, ওড়িশা সীমানাবর্তী অঞ্চলে তথা মেদিনীপুরের দক্ষিণ পচিম দিকে বীরকূল নামক একটি জায়গা রয়েছে। ঠিক এইভাবেই ওয়ারেন হেস্টিংসের নজরে পড়ে বীরকূল। এক কথায় তিনিই দীঘা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এরপরে অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ওয়ারেন হেস্টিংস কোন্টাই (Contai) (আজকের কাঁথি) নিকটবর্তী বীরকূলের প্রচারকার্য শুরু করেন। তিনি বিস্তর বালিময় উপকূল ও নীল সমুদ্র দেখে মোহিত হয়ে গেছিলেন। শ্রীমতি হেস্টিংসকে (Mrs. Hastings) লেখা তাঁর একটি চিঠি অনুযায়ী, “বীরকূল একটি স্বাস্থ্যকর স্থান, যেন পূর্বের ব্রাইটন… বিভিন্ন সংবাদপত্র ও কাউন্সিল রেকর্ড অনুযায়ী, সাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রায় অমুক ব্যক্তি বীরকুলে যাচ্ছেন। এই সমুদ্রতীরে সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হল এখানে কোনো হাঙর নেই। এছাড়াও এখানে কাঁকড়া ছাড়া আর কোনো ক্ষতিকর প্রাণীর উপদ্রব নেই। আর এই জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে অভিজাত ব্যক্তিদের উপযুক্ত অভ্যর্থনা জানাতে ব্যবহারযোগ্য বহুতল বাড়ি এবং উপযুক্ত ও মানানসই আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা করার জন্য”।

আরও পড়ুন: এবার ‘কেনা’ যাবে ‘সময়’! সুইজারল্যান্ডে প্রথম শুরু, ভারতেও সম্ভব কি?

ওয়ারেন হেস্টিংস সবার নজরে আনার জন্য বীরকূলে একটি বাংলো (Bungalow) তৈরি করেন। কিন্তু এটাই হয়তো যথেষ্ট ছিল না ইউরোপীয় অভিজাতদের আকর্ষণ করার জন্য। ইউরোপীয় অভিজাতরা মূলত আরওই আগ্রহ দেখাননি উপযুক্ত রাস্তার অভাবে থাকা খারাপ যানবাহন ব্যবস্থা এবং জলজ এলাকা অতিক্রম করার জন্য থাকা দুর্বল সেতু থাকার কারণে। এছাড়াও, আরও একটি সমস্যা হিসাবে উপকূলবর্তী সাইক্লোন (Coastal Cyclone) তো ছিলই। এই অবস্থায় ইউরোপীয় অভিজাতরা অনীহা দেখাতে শুরু করলেন বীরকূলে আসার ব্যাপারে।

কিন্তু, তারপরেও দীঘা বর্তমানের রূপ পেল কী করে? জানতে চোখ রাখুন রোব বিশেষের পরবর্তী পর্বে (ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)