draupadi murmu taking oath and waving hand
Draupadi Murmu

বাহক নিউজ় ব্যুরো: দেশের ১৫-তম রাষ্ট্রপতি (15th President of India) হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu)। তিনি ২৫শে জুলাই তারিখে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ (Oath) নিলেন। তিনি এর আগে রাজ্যপাল (Governor) ছিলেন এবং ২০২২ সালে হলেন দেশের সর্বপ্রথম নাগরিক। জানেন কি তাঁর জীবন পাতায় রাজনৈতিক সফলতা ছাড়াও বহু ব্যক্তিগত যুদ্ধ লিখিত রয়েছে? বহু মানুষ ভারতের নয়া রাষ্ট্রপতির অদেখা জীবন পৃষ্ঠার সঙ্গে অবগত নন। আসুন, দেখা নেওয়া যাক, ভারতের নয়া প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত জীবনের যুদ্ধকাহিনী, যা দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

পরিচয় ও বাসস্থান (Draupadi Murmu birth date & birthplace):

দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালে ২০শে জুন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওড়িশার রৈরংপুর (Rairangpur) এলাকার বৈদাপসীর সাঁওতাল পরিবারে। বাবার নাম বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু (Biranchi Narayan Tudu)। এছাড়াও, তাঁর আরও দুই ভাই (Brother of Draupadi Murmu) রয়েছে। এদের নাম যথাক্রমে ভগৎ টুডু (Bhagat Tudu) ও সরনী টুডু (Sarani Tudu)।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

নাম জালিকা ( Real Name of Draupadi Murmu):

দ্রৌপদী মুর্মুর আসল নাম পুতি টুডু (Puti Tudu)। পরিবারের তরফে তাঁকে এই নাম দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে তাঁর স্কুলের তরফে তাঁর নাম পরিবর্তন করা হয় ও দ্রৌপদী মুর্মু নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য, মাত্র একবার নয়, বহুবার তাঁর নাম পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর নাম কখনও দুর্পাদী, আবার কখনও দোর্পদী হয়েছে।

এটাও পড়ুন: বিমানে যাতায়াত ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, ভাতা একাধিক, এছাড়াও রাষ্ট্রপতি কী কী সুবিধা পান?

শিক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবন (Draupadi Murmu Education & Perosnal Life):

দ্রৌপদী মুর্মুর স্কুলজীবন ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিজ গ্রামেই আদিবাসী আবাসীয় বিদ্যালয়ে পার হয়। তারপরে তিনি ভুবনেশ্বরের (Bhubaneswar) রমা দেবী ওমেন কলেজ (Rama Devi Women’s College) থেকে কলাবিভাগে (Arts) স্নাতক ডিগ্রী (Graduated) সম্পন্ন করেন। দ্রারিদ্রতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন। দারিদ্রতা (Poverty) তাঁর পথের বাধা হতে পারেনি।

বিবাহিত জীবন (Married Life of Draupadi Murmu): 

তিনি শ্যামাচরণ মুর্মু (Shyam Charan Murmu) নামক এক ব্যাঙ্ক আধিকারিককে (Banker) বিয়ে করেন। তবে, তাঁর বিয়ে যেভাবে হয়েছিল, তা কোনো সিনেমার থেকে কম হয়নি। মূলত কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন তাঁরা দুজনে প্রণয়ঘটিত বন্ধনে আবদ্ধ হন। শ্যামাচরণ সেই সময়ে ভুবনেশ্বরেরই (Bhubaneswar) এক কলেজে পড়তেন। এরপরে, ১৯৮০ সালে শ্যামাচরণ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান দ্রৌপদী মুর্মুর গ্রামে। প্রসঙ্গত, ওই গ্রামেই শ্যামাচরণের আত্মীয়রাও (Shyama Charan’s Relatives) থাকেন। এই অবস্থায় তিনি তাঁর আত্মীয়দের নিয়ে পৌঁছে যান দ্রৌপদী মুর্মুর বাড়িতে। যদিও, দ্রৌপদী মুর্মুর বাবা কোনোমতেই প্রথমে রাজি হননি। এই অবস্থায়, একদিকে যেখানে শ্যামাচরণ জেদ ধরে নেন যে, তিনি যদি বিয়ে করবেন দ্রৌপদীকেই করবেন। সেখানে অপরদিকে দ্রৌপদীও পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি একমাত্র শ্যামাচরণকেই বিয়ে করবেন। অবশেষে, দ্রৌপদীর বাবাকে রাজি করানোর জন্য শ্যামাচরণ ওই গ্রামেতেই তিন দিন ধরে ঘাঁটি তৈরি করে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন ও দুইজনের বিয়েতে সম্মতি দেন। 

আপনজন বিয়োগ (Tsunami that came in Draupadi Murmu’s Life):

১৯৮০ সালে বিয়ে (Marriage) করার পর তাঁর দুই পুত্র সন্তান ও দুই কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। জীবন বেশ সজ্জিত মনে হলেও, এরপরে ধেয়ে আসে ঝড়। প্রথমে ১৯৮৪ সালে তাঁর ছোট মেয়ে (Younger Daughter) মারা যায়। পরবর্তীকালে আবার মাত্র ৭ বছরের মধ্যে তিনি এক-এক করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের (Family Members) তিনি হারাতে থাকেন। ২০০৯ থেকে ২০১৫, এই মাত্র কিছু সময়ের অন্তরে তাঁর জীবনের পাতা থেকে বাদ হতে থাকেন তাঁর স্বামী, দুই পুত্র সন্তান, তাঁর মা ও ভাই। প্রথমে ২০০৯ সালে তাঁর ২৫ বছর বয়সী ছেলে লক্ষণ মুর্মুর (Laksman Murmu) রহস্যময়ী মৃত্যু (Mysterious Death) ঘটে। তিনি এই শোক থেকেই নিজেকে উদ্ধার করতে পারনেনি। কিন্তু, আগামী ৪ বছরের অন্তরেই তাঁর আরেক ছেলে শিপুন মুর্মু (Sipun Murmu) সড়ক দুর্ঘটনায় (Road Accident) মারা যান। এই দুই শোকের বোঝাই তিনি সামলাতে পারছিলেন না, এরই মধ্যে আবার ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী (Husband) হৃদরোগে আক্রান্ত (Heart Attack) হয়ে মারা যান। বর্তমানে তাঁর পরিবার বলতে শুধুমাত্র এক কন্যা ইতিশ্রী মুর্মুই (Itishri Murmu) রয়েছেন। উল্লেখ্য, ইতিশ্রী মুর্মু (Itishri Murmu) বর্তমানে ব্যাঙ্কে চাকরি করেন।  

এটাও পড়ুন: এবার ‘কেনা’ যাবে ‘সময়’! সুইজারল্যান্ডে প্রথম শুরু, ভারতেও সম্ভব কি?

প্রাক-রাজনৈতিক কর্মজীবন (Draupadi Murmu Pre-political Career Life):

রাজনৈতিক জীবনে পা দেওয়ার আগে তিনি অন্যান্য বিভাগেও নিজের জীবন পরিসরের বিস্তৃতি ঘটান। বেশ বৈচিত্র্যময় ছিল তাঁর কর্মজীবন। তিনি প্রথমে ওড়িশা সরকারের অধীনে সেচ বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্টেন্টরূপে কাজ করেছিলেন। তারপরে তিনি রৈরংপুরের (Rairangpur) ‘শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাক এজুকেশন সেন্টার’ (Sri Aurobindo Integral Education Centre)-এ শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। সেখানে তিনি হিন্দি (Hindi), ওড়িয়া (Odia), গণিত (Mathematics) ও ভূগোল (Geography) এই চারটি বিষয় পড়ান।

রাজনৈতিক গৃহে প্রথম প্রবেশ (Draupadi Murmu Political Life):

তিনি যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে (BJP)। শুরু হয় রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর জয়যাত্রা। এরপরে তিনি ১৯৯৭ সালে রৈরংপুর নগর পঞ্চায়েতে (Rairangpur Nagar Panchayat) কাউন্সিলর (Councilor) হিসাবে নির্বাচিত হন। এরপরে ২০০০ সালে আয়োজিত ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনে (Odisha Legislative Assembly Election) রৈরংপুর বিধানসভা আসনে (Rairangpur Assembly Constituency) দাঁড়িয়ে জয়ী হন। তারপরে, তিনি পরপর দুবার ওড়িশার বিধায়ক হিসাবেই থাকেন।

প্রসঙ্গত, বিজেপি ও বিজেডি-এর জোটকালীন সময়েও তিনি রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ওড়িশার বাণিজ্যিক ও পরিবহণ বিভাগে (Commerce and Transportation) এবং ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন (Fisheries and Animal Resources Development) সম্ভব বিভাগে রাজ্যের মন্ত্রী (State Ministry) হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে বিজেপি (BJP) ও বিজেডি (BJD) জোটে ইতি পড়লে তিনি ২০০৯ সালে ময়ূরভঞ্জ লোকসভা আসন (Mayurbhanj Lok Sabha constituency) থেকে লোকসভা নির্বাচনে (Loksabha Election) হেরে যান।

রেকর্ড যাত্রা (Records of Draupadi Murmu):

২০১৫ সালে মে মাসে দ্রৌপদী মুর্মু ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল (Governor of Jharkhand) হিসাবে নিযুক্ত হন এবং রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর কার্যকাল (tenure) শেষ হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে। ২০২২ সালে তিনি দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি (Second Female President of India) হিসাবে পরিচয় পান। সফলতার পথে জীবন যাত্রায় রেকর্ডের রথে যে সমস্ত পরিচয়গুলো রয়েছে, সেগুলো হল-

১। এক্ষেত্রে দ্রৌপদী মুর্মু একটি রেকর্ড বানিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল (First Women Governor Of Jharkhand) হিসাবে। ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে পরিচয় পায়।

২। তারপরে রাজ্যপাল হিসাবে ৫ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করার (First Governor That completed Full Tenure As Jharkhand Governor) রেকর্ডও রয়েছে তাঁর।

৩। রাজ্যপাল হিসাবে তিনি আরও একটি রেকর্ড বানান। ওড়িয়া হিসাবে নিযুক্ত হওয়া তিনি প্রথম রাজ্যপাল ছিলেন (First Odia Governor)।

৪। ২০২২ সালে তিনি ২৫ জুলাই তারিখে তিনি দেশের প্রথম মহিলা আদিবাসী রাষ্ট্রপতি (First Tribal Female President) হিসাবে নিযুক্ত হন।

৫। তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে (First president born in independent India) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

৬।ছাড়াও, দ্রৌপদী মুর্মু দেশের সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপতিও (Youngest President of India)। এর আগে সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপতি ছিলেন নীলম সঞ্জিব (Neelam Sanjiva Reddy)। তিনি ৬৪ বছর ২ মাস ৬ দিন বয়সে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এদিকে, শপথ গ্রহণের সময়ে দ্রৌপদী মুর্মুর বয়স ৬৪ বছর ১ মাস ৪ দিন।