Bahok News Bureau: মেক্সিকান রসায়নবিদ মারিও মোলিনার (Mario Molina) আজ ৮০-তম জন্মদিন। প্রকৃত নাম মারিও জোস মোলিনা হেনকেরিজ (Mario José Molina Henríquez)। ডাঃ মারিও মোলিনা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের ১৯শে মার্চ তারিখে।
তিনি মেক্সিকোর (Mexico) ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটিতে (National Autonomous University) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পরে ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় (University of Freiburg) থেকে অ্যাডভান্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার অধ্যায় সমাপ্ত হলে তিনি পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার উদ্দেশ্যে ইউনাইটেড স্টেট অফ আমেরিকায় (United State of America) পাড়ি দেন। ডাঃ মারিও মোলিনা সত্তরের দশকের শুরুতে গবেষণার অধ্যায় শুরু করেন।
ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইয়ে পড়ানো হয় বিশ্বউষ্ণায়নের (Global Warming) ব্যাপারে, ওজোন স্তর (Ozone layer) ধীরে ধীরে ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে। ওজোন স্তরের ক্ষয়ে যে সমস্ত যৌগগুলোকে দায়ী করা হয় সেগুলোর মধ্যে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (Chlorofluorocarbons) অন্যতম। এই ক্লোরোফ্লুরো কার্বন মূলত এসি, রেফ্রিজারেটর, এরোসোল স্প্রে, হিমায়ন যন্ত্র, প্রসাধন সামগ্রী প্রভৃতি থেকে নির্গত হয়। এই বিষয়টির সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ডাঃ মারিওর গবেষণা।
■ ওজোন স্তর নিয়ে এত মাথা ব্যথার কী রয়েছে?
ওজোন স্তরটি মূলত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে অবস্থিত। এটি একটি বলয়ের মতো পুরো পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে। এই স্তরটি ওজোনোস্ফিয়ার নামেও পরিচিত। পৃথিবীকে সাধারণ মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার বিষয়ে ওজোন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই স্তরটি সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির বিরাট অংশ শোষণ করে নেয় এবং পৃথিবীর জীবমণ্ডল পর্যন্ত আসতে দেয় না। উল্লেখ্য, অতিবেগুনি রশ্মি কারণে ত্বকীয় ক্যান্সার ও ব্লাড ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। এমনকি এই রশ্মি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস হওয়া ও চোখে ছানি পড়ার পিছনেও দায়ী। আর এই কারণেই বর্তমানে ওজোন স্তরে ছিদ্র সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
■ আপনি কি জানেন?
‘পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কৃত্রিম রসায়নের প্রভাব’ (Affect of Synthetic Chemical), এটাই ছিল ডাঃ মারিও মোলিনার গবেষণার বিষয়। গবেষণা চলাকালীনই ওজোন স্তর প্রভাবিত হওয়ার পিছনে যে ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের হাত রয়েছে আবিষ্কার করে ফেলেন ডাঃ মারিও। তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন যে, ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের জেরে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। যার ফলে, অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর জীবমণ্ডলে এসে পৌঁছে যাচ্ছে।
উল্লিখিত বিষয় সংক্রান্ত গবেষণাপত্র তিনি ১৯৭৪ সালে আটলান্টিক সিটিতে মার্কিন কেমিক্যাল সোসাইটিতে পেশ করেন। এরপরে ১৯৯৫ সালে নেচার জার্নালে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই যুগান্তকারী গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে আসার পরে তিনি রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল (Mario Molina Nobel Prize) পুরস্কার পান।
■ কিছু অজানা তথ্য:
১. অনেক ছোট থেকেই নাকি তাঁর বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল।
২. দাবি করা হয়, সেই আগ্রহের বশেই তিনি নিজের বাথরুমকে অস্থায়ী গবেষণাগারে পরিণত করেছিলেন।
৩. মেক্সিকোতে মারিও মোলিনা সেন্টার (Mario Molina Center) নামক একটি গবেষণাগার আছে। এই গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন।
৪. ২০২০ সালে ৭ই অক্টোবর তারিখে মাত্র ৭৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন এই মহান বিজ্ঞানী।
৫. হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ডাঃ মারিও মোলিনা।