বাহক নিউজ় ব্যুরো: বার্মিংহামে (Birmingham) কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ প্রথমবার সোনা জিতল ভারত। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সাইখম মীরাবাঈ চানুর জন্য। তিনি মহিলাদের ৪৯ কেজি বিভাগে অংসগ্রহণ করার মাধ্যমে ৮৮ কেজি ওজন তুলে প্রথম স্থানাধিকার হয়ে সোনা জিতলেন। তিনি এর আগে টোকিও অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থানাধিকার করেছিলেন। খেতাবের পর খেতাব যেন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, তবে কমনওয়েলথ গেমসে এই প্রথম স্বর্ণপদক জয় তাঁর হাত ধরেই এলো।
জন্মস্থান ও ব্যক্তিগত জীবন:
মীরাবাঈ চানু জন্মগ্রহণ করে ১৯৯৪ সালে ৮ই আগস্ট তারিখে মেইতেই পরিবারে (মণিপুরের প্রাচীন পরিবার)। তিনি মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল নগর নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা। তাঁর এই বাড়ি ইম্ফল থেকে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। তিনি মূলত সনামহিজম ধর্ম বিশ্বাসী (এই ধর্ম মেইতেই গোষ্ঠী মেনে চলে)। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি হিন্দু দেব-দেবীরও পুজো করেন।

ছোট্ট মীরাবাঈয়ের ‘সুপার পাওয়ার’:
তিনি মণিপুরের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের বিভিন্ন সংঘর্ষের মাঝেই বড়ো হয়ে উঠতে হয়েছে তাঁকে। যদিও, তাঁর প্রতিভা তাঁর পরিবার অনেক আগেই চিনতে পেরে গেছিল, যখন তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সী ছিলেন। মীরাবাঈয়ের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি খুব সহজেই গোছা গোছা জ্বালানী কাঠ বাড়ির জন্য বয়ে আনতেন। যেখানে কিনা তাঁর ভাই জ্বালানীর কাঠ আনতে গেলে সেগুলো তোলার সময়ই রীতিমতো যুদ্ধ করতো।
আরও পড়ুন: গোল্ড জিতলেন মীরাবাঈ চানু ,বার্মিংহাম কমনওয়েলথসে ভারতের প্রথম স্বর্ণপদক
শুরু এক ক্রীড়াবিদের অজানা সফর:
আরামপ্রদ জীবনের মধ্যে দিয়ে মোটেই তাঁর ‘ক্রীড়াবিদ সুলভ’ জীবন শুরু হয়নি। শুরু হয়েছে প্রচণ্ড সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে। তিনি নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বালি বইতেও শুরু করেন। আর এইজন্য তিনি ট্রাকচালকদের সঙ্গে সফরও করতেন। উল্লেখ্য, মীরাবাঈ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন মণিপুরের স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে। এরপরে, তিনি যখন অলিম্পিক্সে রূপোর পদক জয় করেন, সেই ট্রাকচালকদের ডেকে তিনি পা’য়ে প্রণাম করে সম্মান জানান।

পরিচয় প্রাপ্তি আন্তর্জাতিক স্তরে:
তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত পান ২০১৪ সালে গ্লাসগোয় আয়োজিত কমনওয়েলথ গেমসে। সেইবছর তিনি ৪৮ কেজি বিভাগে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী হন এবং রূপোর পদক জয় করেন।
রিও অলিম্পিক ২০১৬: রিও অলিম্পিক ২০১৬-তে ৪৮ কেজি বিভাগে তিনি অংশগ্রহণ করে কোয়ালিফাই করেন ঠিকই। কিন্তু, কোনো রাউন্ডেও সফলভাবে ভারত্তোলন না করতে পারায় সেই সফর তাঁর অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
আরও পড়ুন: ‘স্মৃতি ইরানিও রাষ্ট্রপতির অবমাননা করেছেন’, স্পিকারের কাছে পাল্টা দাবি অধীরের
২০১৭-২১ সালের রোলার কোস্টার সফর: ২০১৬ সালে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ওয়েট লিফটিং প্রতিযোগিতায় ৪৮ কেজি বিভাগে তিনি স্ন্যাচে ৮৫ কেজি ও ক্লিন জার্কে ১০৯ কেজি মিলিয়ে মোট ১৯৪ কেজি তুলে স্বর্ণপদক পান। এরপরে তিনি কমনওয়েলথ গেমস ২০১৮-তে ভারতের জন্য প্রথমবার গোল্ড জেতেন। এই গেমসে তিনি স্ন্যাচে ৮৬ ও ক্লিন জার্কে ১০৬ কেজি তুলে তাঁর তখনের সেরা ব্যক্তিগত পারফমেন্স দেন। এরপরে তিনি এশিয়ান ওয়েট লিফটিং চ্যাম্পিয়ন্স ২০১৯-এ ৪৯ কেজি বিভাগে মোট ১৯৯ কেজি তুলে আবার তাঁর ব্যক্তিগত সেরা পারফমেন্স দিলেও একটুর জন্য তাঁর হাত থেকে ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয়ে যায়। মোট ওজনে তৃতীয় স্থানাধিকারীর সঙ্গে তাঁর সমান হয়ে গেলেও, স্ন্যাচে তিনি তৃতীয় স্থানাধিকারীর থেকে পিছিয়ে যান। এই ঘটনার থেকে আর মাত্র ৪ মাস পরেই তিনি সিনিয়র ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়ন্স ২০২০-এ তিনি ৪৯ বিভাগে মোট ২০৩ কেজি তুলে আবার নিজেরই রেকর্ড ভাঙেন এবং স্বর্ণপদক জয় করেন। তারপরে ২০২১ সালের এপ্রিলে এশিয়ান ওয়েট লিফটিং চ্যাম্পিয়ন্স ২০২০-তে ক্লিন-জার্কে ১১৯ কেজি তুলে অলিম্পিক ওয়েট লিফটিং-এ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বানান। এরপরে, ২০২১ সালের জুন মাসে সামার অলিম্পিক ২০২০-তে কোয়ালিফাই করা একমাত্র ভারতীয় মহিলা ছিলেন। এই খেলায় তিনি ৪৯ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।
টোকিও অলিম্পিক ২০২০: তিনি ক্লিন-জার্কে ১১৫ কেজি তুলে টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এ রৌপ্য পদক জয় করেন। পিভি সিন্ধুর পরে সিল্ভার জয়ী তিনি দ্বিতীয় মহিলা। টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এ তিনি ভারতের প্রথম পদক এনেছিলেন। এই সাফল্যের পরে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন. বিরেন সিং এবং অশ্বিনি বৈষ্ণব যথাক্রমে ১ কোটি ও ২ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন।

বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস ২০২২: ইংল্যান্ডে আয়োজিত বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ ভারতের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক জয় করেন। তিনি স্ন্যাচে ৮৮ কেজি সহ মোট ২০১ কেজি ওজন তোলেন।