migrant women workers of beed district in Maharashtra and Uterus image
Maharashtra Women - Hysterectomy: মহারাষ্ট্রীয় মহিলাদের 'হিস্টেরেক্টমি', সামাজিক শোষণ না আর্থিক চাহিদা! কেন জরায়ুর অপসারণ?, গ্রাফিক্স: বাহক

Bahok News Bureau: মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বীড জেলার (Beed District) মারাথওয়াড়া এলাকার মহিলারা নিজেদের গর্ভাশয় বাদ দিচ্ছেন। কোনো একজন নয়, বহু মহিলা। কিন্তু কেন? এটা কি জানেন? এর পিছনে কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ নেই। রয়েছে আর্থিক কারণ, রয়েছে সামাজিক কারণ। জানা গেছে, তাঁরা এই পদ্ধতিতে আপন করে নিয়েছেন নিজেদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং দৈনিক আয় হ্রাস বন্ধ করার জন্য।

এই বীড জেলাতেই ব্যাপক হারে ‘হিস্টেরেক্টমি’ (Hysterectomy) দেখা গেছে। এই পদ্ধতি গ্রহণের প্রবণতা একটি বিশেষ কিছু মহিলাদের মধ্যে দেখা গেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত মহিলা প্রতিবেশী জেলায় আখ কাটার কাজের জন্য যান, তাঁদের মধ্যে হিস্টেরেকটোমি করার বেশি প্রবণতা দেখা গেছে।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

হিস্টেরেক্টমি কী? (What is Hysterectomy in Bengali?)

হিস্টেরেক্টমি হল এক বিশেষ প্রকারের সার্জারি, যে সার্জারিতে মহিলাদের গর্ভাশয় বাদ দেওয়া হয়। এই সার্জারি করার ফলে সংশ্লিষ্ট মহিলার মধ্যে আর ঋতুচক্র দেখা দেয় না, বা ওই মহিলার আর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ডাক্তারি ভাষায় বলতে গেলে, এই পদ্ধতিকে অন্যভাবে ‘সার্জিক্যাল মেনোপজ’ও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে সাধারণত, ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিয়ে গর্ভাশয় তথা জরায়ু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময়ে ডিম্বাশয়ও বাদ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, জরায়ু বা গর্ভাশয় হল সেই অঙ্গ, যেখানে মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হলে ভ্রূণ তথা শিশু বড়ো হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: ‘Toilet’- ek ‘Pressure’ Katha: বাঙালির কীর্তিতে ট্রেনে ‘শৌচাগার’, ভারতীয় রেলে ‘টয়লেট’র ইতিহাস, টয়লেট সৃষ্টি- পর্ব ১

হিস্টেরেক্টমি মহিলাদের শরীরে কিন্তু ইতিবাচক ফল মোটেই টেনে আনে না, এই সার্জারির ফলে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দেয় মহিলাদের শরীরে। কারণ, এই সার্জারির কারণে মহিলাদের শরীরে হরমোনগত তারতম্য, ক্যালসিয়ামের অভাব, নিয়মিত শরীরে ব্যথা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

মহারাষ্ট্রের মহিলারা গর্ভাশয় বাদ দিচ্ছেন কেন? (Why Women of Maharashtra Removing Wombs in Bengali?) 

‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের বীড জেলার মহিলাদের ঋতুচক্রের হওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে যাতে জরিমানা না দিয়ে হয়, সেইজন্যে তাঁরা ‘হিস্টেরেক্টমি’ সার্জারির সাহায্য নিয়েছেন।

মহারাষ্ট্রের হাজীপুর গ্রামের আখ গাছ কাটার সময় যে সমস্ত শ্রমিকরা থাকেন, তাঁরা সেই সময়ে বাড়ির পেট চালানোর জন্য মহারাষ্ট্রের পশ্চিম প্রান্তে চলে যান। এই শ্রমিকদের মধ্যে মহিলা ও পুরুষ দুই থাকে। এই কাজের ঠিকাদাররা সেই সমস্ত মহিলাদের অগ্রাধিকার দেন, যাদের জরায়ু তথা গর্ভাশয় নেই। তাঁদের মতে, এই সমস্ত মহিলারা গর্ভাশয় থাকা মহিলাদের তুলনায় কম ছুটি নেবেন। কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে যে, ঋতুমতী মহিলারা অন্যদের তুলনামূলক বেশি ছুটি নিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: Jatindra Nath Das Death Reason: যতীন্দ্রনাথ দাস স্মরণীয় কেন?, মৃত্যুর কারণ ও জীবনী

রাজ্য সরকারি তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মহারাষ্ট্রে ৪,৬০৫ জনেরও বেশি মহিলা জরায়ু অপসারণ করিয়েছেন। যদিও, এই বিষয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের দাবি, বীড জেলা সম্পর্কিত কেন্দ্রের বা রাজ্যের সরকারি তথ্যের ১৪ গুন বেশি মহিলা হিস্টেরেক্টমি করিয়েছেন।

অতিরিক্ত দারিদ্র্যতা ও কম বয়সে বিয়ে:

আখ কাটার কাজের জন্য ৫-৬ লক্ষেরও বেশি মহিলা বীড জেলা থেকে মহারাষ্ট্রের অন্যান্য প্রান্তে ও কর্ণাটকের সীমান্ত এলাকায় যান। এই পরিযায়ী মহিলা শ্রমিকদের (Women migrant workers) মধ্যে রয়েছেন গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মহিলারাও। কর্মসংস্থানের তুলনামূলক কম উৎস (বিস্তীর্ণ অংশ খরাপ্রবণ এলাকা) থাকা এবং এই এলাকার পরিবারগুলো অত্যাধিক দারিদ্র্যতায় ডুবে থাকার কারণেই মহিলারা মূলত সংসার চালানোর জন্য রাজ্যের অন্যপ্রান্তে গিয়ে আখ কাটতে বাধ্য হন। এইসবেরই মাঝে মহারাষ্ট্রে সরকারের একটি কমিটি এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে বিশেষ কয়েকটি সামাজিক কারণ তুলে ধরেন।

এই বিষয়ে সরকারি নথিতে কী রয়েছে? (What Does Government Report Says about Hysterectomy in Beed, Maharashtra?)

বীড জেলার আখ কাটা মহিলাদের মধ্যে হিস্টেরেক্টমির (Hysterectomy) বাড়তে থাকে চাহিদার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০১৯ সালে সদস্য কমিটি গঠন করা হয় বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তদন্ত করার জন্য। এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন মহারাষ্ট্রের বিধান পরিষদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার ডাঃ নিলাম গোড়ে (Deputy Speaker Dr Neelam Gorhe)। এই কমিটি বীড জেলার ৮২, ৩০৯টি মহিলাকে নিয়ে একটি সার্ভে করে। এই সার্ভেতে সেই সমস্ত মহিলাদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়েছিল যারা একবারের জন্যেও আখ কাটার জন্য নয় স্থানে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ‘Daredevil’ Charlie Cox-Kevin Feige: ‘কেভিন ফাইগির জন্য নতুন জীবন পেলাম’, কৃতজ্ঞতা স্বীকার ‘ডেয়ারডেভিল’ চার্লির

সরকারের তরফে পরিচালিত এই সার্ভেতে প্রকাশ্যে আসে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। কারণ, এই সার্ভেতে উঠে আসে সেই কারণ, যে জন্য উক্ত জেলার মহিলারা গণহারে ‘হিস্টেরেক্টমি’ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছেন। জানতে পারা যায় যে, দৈনিক আয় যাতে কম না হয়, শুধুমাত্র সেইজন্যে তাঁরা জরায়ু বাদ দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন।

কাজ সঠিক সময় শেষ করতে দৈনিক ১২ ঘন্টা কোনো শ্রমিক কাজ করলে, ঠিকাদারের তরফে বার্ষিক ১-১.৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আর সেই ‘পাপী পেটের’ দায়েই শ্রমিক মহিলারা (Women Workers) ২৫-৩০০০০ টাকা খরচ করে ফেলেন জরায়ু বাদ দেওয়ার জন্য তথা ‘হিস্টেরেক্টমি’ প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে ফেলেন।

সার্ভের রিপোর্টে জানা যায় যে, সার্ভেতে অংশগ্রহণ করা মহিলাদের মধ্যে ১৩, ৮৬১ জন মহিলা হিস্টেরেক্টমি করিয়েছেন। সার্জারি করা মহিলাদের ৪৫% মহিলাদের মধ্যে পরবর্তীকালে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেছেন। এই প্রসঙ্গে ডাঃ গোড়ে বলেন, “হিস্টেরেক্টমি করা মহিলাদের বেশিরভাগ জনের বয়স ৩৫-৪০ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে আবার কিছু মহিলার ২৫ অনুর্দ্ধও রয়েছে”।

আরও পড়ুন: How to Lose Weight by Changing Habits Before Durga Pujo: দুর্গাপূজার আগে শুধুমাত্র অভ্যাস বদলেই ওজন কমান!

তিনি আরও বলেন, “আমরা এও দেখেছি যে, কম বয়সে বিয়ে বা একাধিকবার সন্তান জন্ম দেওয়ায় মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাঁরা চিকিৎসা করানোর বদলে হিস্টেরেক্টমির আশ্রয় নিয়েছেন”। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাত সদস্যের এই কমিটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একাধিক পরামর্শ দেন এলাকার পরিযায়ী মহিলা শ্রমিকদের। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘স্বাস্থ্য বিমা কার্ড’। এই কার্ড ব্যবহার করে সেই সমস্ত মহিলা শ্রমিকরা নিয়মিত চেকআপ বা হিস্টেরেক্টমি করার আগে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের পরামর্শ পেতে সাহায্য করবে।