বাহক নিউজ় ব্যুরো :খাতায় কলমে আজ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। ১০২ বছর পার করে ফেলল ‘স্বাধীন’ আফগানরা। কতটা স্বাধীন আফগানরা? কেমন কেটেছে স্বাধীনতার পরে এই ১০২ বছর? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

 

আফগানিস্তানে বরাবর দুটো মতাবাদের সংঘাত হয়েছে, আফগানিস্তানে যেমন লিবারেলরা ছিল, তেমনই ছিল ইসলামপন্থীরা। স্বাধীনতার পরেও সেদেশে ছিল রাজতন্ত্র। রাজা আমানুল্লার শাসনে ধীরে ধীরে পশ্চিমী দেশগুলোর মতো হতে থাকে আফগানিস্তান। মেয়েদের জন্য স্কুল হয়, নানা ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে আসে পুরুষদের মতোই। তখন মুসলিমপন্থী আফগানদের সাথে লিবারেলদের গৃহযুদ্ধ হতে থাকে প্রায়ই। ষাটের দশকে আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই সময় বহু মেয়ে ছোট পোশাকে রাস্তায় স্বছন্দে ঘুরে বেরাতে পারতো। সত্তরের দশকে ক্ষমতায় আসে বামপন্থী রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রেসিডেন্ট নূর মহম্মদ তারাকির নেতৃত্বে আফগানিস্তানের আরো উন্নতি হয়। প্রগতিশীলভাবে চলতে থাকে আফগানিস্তান। ফলে ইসলামপন্থী দল মুজাহিদ্দিনের সাথে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সেইসময় আরেকটি বামপন্থী দলের নেতা হাফিজুল্লা, তারাকিকে খুন করে গদিতে বসে পড়ে। হাফিজুল্লা বামপন্থী হলেও ইসলাম মতেই দেশ শাসন করতে থাকে। এই সময় সোভিয়েত রাশিয়া এসে বারবাক কর্মালকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করে। সোভিয়েত রাশিয়ার এই নাক গলানো দখলদারী আমেরিকার পছন্দ হয় না। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই এরা বিশ্বের নানা ছোট ছোট দেশে দখলদারী ফলাতে চাইত। তাই আমেরিকা মুজাহিদ্দিনকে সাপোর্ট করে অস্ত্র, অর্থ ইত্যাদির জোগান দেয়।এদের সাথে ছিল পাকিস্তান, সৌদি আরব। আমেরিকা বলে রাশিয়া আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে তারাও চলে যাবে। সোভিয়েত রাশিয়া যখন ভেঙে যায় তখন আফগানিস্তান ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তুু তখনও মুজাহিদ্দিনকে অস্ত্র, অর্থের জোগান দিয়ে যায় এবং তাদের নির্বাচনে জেতার বড় ভূমিকা পালন করে আমেরিকা।

Advertisements
Appy Family Salon AD Banner Use Code to get Discount

 

এরপর আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে। চারবছর এরকম চলার পর তালিবানরা ক্ষমতায় আসে। আফগানদের বোঝানো হয় মাদ্রাসার এই ছাত্রগোষ্ঠী আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তখন তালিবানদের অস্ত্র, আর্থিক সাহায্য করে গিয়েছে আমেরিকা। কিছুদিন পর থেকেই বর্বরতার চরম সীমায় পৌছায় তালিবানরা। মেয়েদের ছিল না কোনোরকম স্বাধীনতা। পুরুষদের ও ধর্মীয় ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে থাকতে হতো। ২০০১ সালে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের হামলার পর থেকে চাপ বাড়ে তালিবানদের উপর। নর্দান এলাইন্স আমেরিকার সাহায্য নিয়ে তালিবানদের ঘাটিগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিতে থাকে। আমেরিকা তখন থেকেই আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে রাখে। কিন্তুু কতদিন আর অন্য দেশে ঘরের ছেলেদের যুদ্ধ করতে পাঠানো যায়? সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা। ওদিকে এই কয়েক বছরে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে তালিবান।

স্বাধীনতার ১০২ বছর পরে আজও আফগানিস্তানের আকাশে বাতাসে বারুদের গন্ধ। এ যেন অন্তহীন গোলা-গুলির লড়াই। এই ১০২ বছরে শুধু গৃহযুদ্ধ, আমেরিকা-তালিবান যুদ্ধ ক্রমাগত হতে দেখছে আর পিছিয়ে পড়ছে কাবুলিওয়ালার দেশ। ১০২ তম স্বাধীনতা দিবসে সত্যিকারের স্বাধীনতা খুঁজছে আফগানরা।