Table of Contents
Nithari Serial Killings Timeline: দেশের বুকে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে অন্যতম হলো উত্তরপ্রদেশের নিঠারি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডে অসংখ্য যুবতী, কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন, নরমাংস ভক্ষণ, শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টার মতো একাধিক ভয়ঙ্কর অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিঠারি হত্যাকাণ্ডের শেষ মামলাতেও বেকসুর খালাস পেয়েছে মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুরিন্দর কোলি। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য যুবতী, কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন, নরমাংস ভক্ষণ, শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টার মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ ছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজা আগেই খারিজ হয়েছিল, আর এবার শেষ মামলাতেও নির্দোষ প্রমাণিত হলো সুরিন্দর। এদিন মামলার শেষ শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ, সুরিন্দরকে বেকসুর খালাস করেন। প্রধান বিচারপতি বিআর গবই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ বলে, ‘‘আবেদনকারীকে খালাস করা হল। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।’’ চলুন জেনে নেওয়া যাক এই নিঠারি হত্যাকাণ্ড কী?
নিঠারি হত্যাকাণ্ড কী?
২০০৫ এবং ২০০৬ সালে নয়ডায় নিঠারি গ্রামে অস্বাভাবিক ভাবে অনেক মহিলা এবং শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। ক্রমাগত সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঘটনাটি শিরোনামে আসে। থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিখোঁজ রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। এরপর একের পর এক শিশু, কিশোরী নিখোঁজ এবং পরে নর্দমার পাড় থেকে তাদের দেহাবশেষ উদ্ধার হতে থাকে। ধারাবাহিক নিখোঁজ ও খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় পুলিশ তদন্তে নেমে ২০০৬ সালে এরপর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়েনয়ডায় পেশায় ব্যবসায়ী মণীন্দ্র এবং তার কর্মচারী সুরেন্দ্র মতো দুই নরখাদকের খোঁজ পান। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুরেন্দ্রকে গ্রেফতার করলেও মণীন্দ্র তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। সুরেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফোনে কথা বলা ছাড়া আর কোনো প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি পুলিশ। এরপর নন্দলাল আদালতের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। আদালত পুলিশকে মামলাটির বিশদ তদন্ত করার নির্দেশ দিলে কিছু দিন তদন্ত চালিয়ে ২০০৬ সালের ২৯শে ডিসেম্বর পুলিশ মণীন্দ্রের বাংলোর পিছনের নর্দমা থেকে নরকঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ ভর্তি অনেকগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মণীন্দ্র এবং গৃহকর্মী সুরেন্দ্রকে। এরপর গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি উঠতে থাকে। এরপর জনরোষের চাপে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। সিবিআই ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি। এরপর হঠাৎ সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয় যে, সুরেন্দ্র দোষ স্বীকার করে বয়ান দিতে রাজি। সিবিআই আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জেলাশাসকের সামনে সুরেন্দ্রের বয়ান রেকর্ড করা হয়। জানা যায় যে, মণীন্দ্র এবং তাঁর বাড়ির পরিচারক সুরেন্দ্র, শিশু, কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন। তারপর কঙ্কালগুলি মণীন্দ্রর বাংলোর পিছনের নর্দমায় ফেলে দেওয়া হত। এমনকি, মণীন্দ্রের বাংলো থেকে ক্যামেরা লাগানো ল্যাপটপ, কিছু কামোত্তেজক বই এবং মণীন্দ্রের সঙ্গে কিছু নিরাবরণ শিশুর ছবি থেকে উদ্ধার করা হয়।
বেকসুর খালাস দুই অভিযুক্ত
তদন্তে জানা যায় যে, মণীন্দ্র মাঝেমধ্যেই বাড়িতে যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতেন। অভিযুক্ত মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্র, দু’জনেরই ব্রেন ম্যাপিং এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষা করার পর মণীন্দ্র ছাড়া পেয়ে যান। সিবিআই জানায় যে, মোট মোট ১৯টি নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই কিশোরীদের কঙ্কাল। ১৫টি খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সুরেন্দ্র, তার মনিব মণীন্দ্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। যদিও মণীন্দ্র এই খুনগুলির বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং খুনগুলি তার অনুপস্থিতিতে হয়েছে বলেই জানান সিবিআই। এরপর আবারো মণীন্দ্রর বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্রকে ১৪ বছর বয়সি রিম্পাকে খুন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় গাজিয়াবাদের বিশেষ দায়রা আদালত। মণীন্দ্র, মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচতে অনেক বার আদালতের কাছে আর্জি জানান, তবে তা খারিজ হয়। ২০২৩ সালের ১৬ই অক্টোবর মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্রকে তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ব্যতীত অন্য কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাবে এলাহাবাদ হাই কোর্ট উভয়কেই খালাস দেয়। এরপর মণীন্দ্র ছাড়া পান। চলতি বছর অর্থাৎ২০২৫ সালের ১১ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সুরেন্দ্রর বিরুদ্ধে চলা শেষ মামলা থেকে তাকেও বেকসুর খালাস করে মুক্তির নির্দেশও দেয়।
Published on Monday, 17 November 2025, 5:40 pm | Last Updated on Monday, 17 November 2025, 5:40 pm by Bahok Desk









